মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

রণাঙ্গণের সাহসীযোদ্ধা রশিদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান

কেবি ২৫ ডিসেম্বার ২০২৪ ০৩:৫১ পি.এম

রণাঙ্গণের সাহসীযোদ্ধা রশিদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান সাহসীযোদ্ধা আব্দুর রশিদ

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : কাঠমিস্ত্রি আব্দুর রশিদ। ১৯৭১সালে ছিলেন টকবকে যুবক। মাতৃভূমিকে ভালোবেসে দেশের স্বধীনতার জন্য জীবন বাঁজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার পর রণাঙ্গণের সহযোদ্ধা শহীদ আবু খাঁর মা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করায় অভিমান করেই স্বীকৃতি চাননি আব্দুর রশিদ। কিন্তু জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে ভাতা নয়, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান এই রণাঙ্গণের যোদ্ধা।

আব্দুর রশিদের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বাঘবেড় গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত হাফিজ উদ্দিন এবং মাতার নাম মৃত শহরের নেছা। পেশায় কাঠমিস্ত্রি হলেও গ্রামবাসী তাকে একজন দেশপ্রেমিক হিসাবে চেনে। বাঘবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় আব্দুর রশিদের সাথে। আলাপচারিতায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে রণাঙ্গণের নানা ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।

আব্দুর রশিদ বলেন ‘১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ শহরে আনসারের (সশস্ত্র) প্রশিক্ষণ নেই। ৭মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেয়ার পর আনসার শিবিরে গুঞ্জন শুরু হয় যেকোনো মূহুর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে ডাক আসতে পারে তাই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

১৯৭১ সারের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী নির্বিচার গণহত্যা শুরু করলে পরের দিন আমাদের গ্রামে খবর পৌছে। এরপর আমরা আনসাররা ময়মনসিংহে জড়ো হই। পাকবাহিনী ট্রেনযোগে ময়মনসিংহ না আসতে পারে সেজন্য জেলা আনসার অফিসার মালেক সাহেব আমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে প্রত্যেককে অস্ত্র ও গুলি  দিয়ে কেওয়াটখালী এলাকায় রেলপথে পাহাড়ায় পাঠান। কয়েকদিন পর সেখান থেকে আমার ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে যাওয়ার পথে পাকবাহিনী বিমান হামলা করলে ছত্রভঙ্গ হয়ে অস্ত্র নিয়ে গৌরীপুর বাড়িতে আসি। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে প্রশিক্ষণ নিতে উচাখিলা এলাকার এক সেনা সদস্যর সাথে অস্ত্র নিয়ে নেত্রকোনার রংরা বর্ডার দিয়ে ভারত প্রবেশ করি’।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কোম্পানী কমা-ার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে নেত্রকোনার কলমাকান্দা,  নাজিরপুর, বাইশদার, বড়াইল, নেত্রকোনা বিজয় সহ বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন আব্দুর রশিদ।

ভারত প্রবেশের পর ইয়ুথ ক্যাম্পে ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহানের দেখা হলে রশিদ সেখানে থেকে যান। পরের দিন নাজমুল হক তারার কোম্পানি তুরা ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে আসার খবর পেয়ে  ক্যাপ্টেন চৌহানের অনুমতিতে তাদের দলে ঢুকে পড়েন রশিদ। এরপর বাংলাদেশে প্রবেশ করে নেত্রকোনারা ঠাকুরাকোনা ব্রীজ ধ্বংস করেন।

নেত্রকোনার নাজিরপুর যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আব্দুর রশিদ বলেন, নাজিরপুর বাজারে একটি কাচারীতে পাঞ্জাবিদের ক্যাম্প ছিলো। আমাদের কোম্পানী কমা-ার তারা ভাই পরিকল্পনায় ওই ক্যাম্প আগুন দিয়ে পুড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এসময় কংশ নদীর হয়ে পাঞ্জাবিরা অতর্কিতে আক্রমণ করলে ডা. আজিজ, ফজলুল হক, ইয়ার মাহমুদ সহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরপর শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে কমা-ার তারা ভাই মারাত্মকভাবে আহত হন।

নেত্রকোনা শহর বিজয় করতে ১৯৭১ সালের ৮ই ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহান ও তারা কোম্পানির আবু সিদ্দিক ও খসরু ভাইয়ের নেতৃত্বে ভোররাতে পাকবাহিনীকে লক্ষ্য করে মর্টার শেল নিক্ষেপ করলে মোক্তার পাড়া  ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। আমি আর আবু খা ব্রিজের দক্ষিণ পাড় থেকে পাকবাহিনীকে লক্ষ করে গুলি ছুড়ছিলাম। এসময় পাকবাহিনীর একটি বুলেট আবু খা বুকে আঘাত হানলে সে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এছাড়াও ওই যুদ্ধে আব্দুর রশিদ ও আব্দুস সাত্তার শহীদ হন। গুরুতর আহত হয় সিদ্দিক ভাই।

কথা প্রসঙ্গে রশিদ জানান, স্বাধীনতার পর শহীদ আবু খাঁর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি টাকার অভাবে তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা হচ্ছেনা। এরপর আমি বাড়ি এসে কিছু টাকা সংগ্রহ করে কয়েকদিন পর ওই বাড়িতে গিয়ে আবু খাঁর বোনের হাতে টাকা দিয়ে বলি মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। তখন তার বোন কাঁদতে কাঁদতে কবর দেখিয়ে বলেন মা আর বেঁচে নেই। স্বাধীন দেশে শহীদের মা বিনা চিকিৎসায় মারা গেলো সেই কষ্টে স্বীকৃতি চাইনি। এখন বয়স হয়ে গেছে। তাই মৃত্যুর আগে সকারের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নামের স্বীকৃতিটা দেখে যেতে চাই। আমার কোনো ভাতার দরকার নেই।

নেত্রকোনা সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাম-ার আইয়ুব আলী বলেন, আমাদের কোম্পানি যখন ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে আসছিলো তখন ভারতীয় আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহান অস্ত্রসহ রশিদ ভাইকে আমাদের দলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর রশিদ ভাই আমাদের সাথে থেকে নেত্রকোনা অঞ্চলের সবগুলো যুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই রশিদ ভাই একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাকে যেনো দ্রুত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় সকল সম্মাণ ও সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। 

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

থাইল্যান্ডের নারী এলেন বিয়ে করতে, হলেন ধর্ষণের শিকার!

news image

শরীয়তপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০

news image

বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রায়পুরায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন

news image

সালথায় বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

news image

চট্টগ্রামে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর

news image

বাঞ্ছারামপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

news image

পাঁচবিবিতে প্রকল্পের নামে জমি দখলের পায়তারা: দুদকে অভিযোগ

news image

চট্টগ্রামে এখন রাশিয়ার ৩ যুদ্ধজাহাজ

news image

'পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়'

news image

রায়পুরায় ইউপি সদস্যকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

news image

গাজীপুরে কৃষক দল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

news image

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে অভিযান, ১৭ বন্যপ্রাণী জব্দ

news image

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি: হচ্ছে না ভোট, বিএনপি-জামায়াতের পদ ‘ভাগাভাগি’

news image

ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে নোয়াখালী শহরে বিক্ষোভ

news image

পুকুর পাড়ে পড়েছিল বস্তাবন্দী খণ্ড-বিখণ্ড ৩ মরদেহ

news image

আখাউড়ায় ট্রেনে তেলচুরি: চালক ও পরিচালকসহ ৮ জনের নামে মামলা

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আড়াই হাজার কৃষক পেলেন বিনামুল্যের সার-বীজ

news image

সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে বাংলাদেশির মৃত্যুর অভিযোগ

news image

বান্দরবানের পাহাড় থেকে ৯ জনকে অপহরণ

news image

সরাইলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ আহত অর্থ শতাধিক

news image

নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার

news image

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল পঞ্চগড়

news image

ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনভর বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ

news image

মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে প্রতিবাদে উত্তাল গাজায় গনহত্যা বিক্ষোভ

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ১১ সদস্যে বিশিষ্ট কমিটি গঠন

news image

ঢাকায় গাজার সমর্থনে বিক্ষোভ ও সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গঙ্গাস্নানে উপচেপড়া ভীড়

news image

চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা বিএনপির

news image

কুমিল্লা থেকে শুরু হয় ধাওয়া, নোয়াখালীর সুধারাম থানায় রক্ষা