মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

সুরমা নদী খননের নামে হরিলুট

কেবি ১২ অক্টোবার ২০২৪ ০৩:৩৩ পি.এম

মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে সুরমা নদী খনন

সিলেট প্রতিনিধি : আসামের বরাক নদী থেকে আসা সুরমা নদী দিনের পর দিন মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। সেই সুরমা নদী বছরের প্রায় ৯ মাস পানি থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে নদীর ওপর থেকে সে পারে হেটে হেটে পার হওয়া যায় অনেক স্থানে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে উৎসমুখ থেকে প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটারের মধ্যে নদীতে জেগে ওঠে ৩০ টিরও অধিক চর। অন্য দিকে বর্ষা মৌসুমে নদী উপচে পানিতে তলিয়ে যায় আশপাশের এলাকা। সিলেট জুড়ে তখন দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। 

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবেশকর্মীরা দীর্ঘ দিন থেকেই এই নদীর উৎসমুখ খননের দাবি জানিয়ে আসছেন।

২০২২ সালে সিলেটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বন্যার এই ব্যাপক তার জন্যও সুরমার ভরাট হয়ে যাওয়াকে দায়ী করা হয়। ওই বন্যার পর ২০২৩ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট নগরী ও আশপাশের এলাকায় সুরমা নদী খনন করার উদ্যাগ  নেয়া হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটার কিপার, আব্দুল করিম কিম বলেন, নদী ড্রেজিং প্রকল্প হলো ডাকাতির মতো। এর কোনো হদিস মিলে না। কোনো কুল কিনারা নেই। এই যেমন সুরমা খননের নামে ৫০ কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেল।

সুরমা-কুশিয়ারাসহ সকল নদীর তলদেশে খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। এটা যে ভাবেই হোক করতেই হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পেশাজীবীদের সমন্বয় করে একটি তদারকি কমিটিও করতে হবে। নদী খননের নামে যাতে লুটপাট না হয়  সে দিকে কঠোর ভাবে নজরদারি থাকতে হবে।

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘বিগত সরকারের আজ্ঞাবহ প্রশাসন এবং তাদের দলীয় নেতারা মিলে যৌথ ভাবে সিলেট রক্ষাকারী এ প্রকল্পে লুটপাট করেন। বিগত সরকারের আমলে এমন লজ্জাষ্কর দুর্নীতির উদাহরণ অগনিত। আওয়ামী আমলে প্রকল্প গুলোর বরাদ্দ দেয়াই হতো লুটপাটের জন্য। আমরা এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাই।

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারী কাজে নিয়োজিত বিভাগ গুলোর ক্ষমতা, দক্ষতা, কার্যক্রম সর্বোপরি প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে নানা ক্ষেত্রে দেশের মানুষ তার তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অন্তর্বরতীকালিন সরকার বিগত সরকারের আমলে চলা অনিয়ম  রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং অচিরেই জনসাধারণ এর ফল ভোগ করবে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের অনিয়ম তদন্তে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করা জরুরী। সেই সাথে অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্যই এর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে পাউবো সিলেটের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সাজু সিকদার বলেন, এ প্রকল্প সম্পর্কে তার তেমন কিছু জানা নেই। অন্যদিকে পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশের সাথে এ ব্যাপারে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদ এসে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদী মেঘনায় মিলিত হয়েছে। তবে বছরের পর বছর ধরে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে বরাক ও সুরমার সংযোগস্থল। ফলে বরাক থেকে আসা পানি সুরমায় না এসে চলে যায় কুশিয়ারায়। এতে বর্ষাকালের কয়েক  মাস ছাড়া সারাবছরই পানিশূন্য থাকে একসময়ের খরস্রোতা নদী সুরমা। শুষ্ক মৌসুমে নদীজুড়ে অসংখ্য চর জেগে ওঠে। ফলে হেঁটেই পার হওয়া যায় নদী। এ সময় বন্ধ হয়ে পড়ে নৌ চলাচল। 

নদী তীরবর্তী মানুষদের জীবিকারও অন্যতম উৎস সুরমা। পানিশূন্য হয়ে পড়ায় জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জ উপজেলার নদীপাড়ের কৃষি ও মৎস্যজীবী মানুষের দুর্দশার অন্ত থাকে না। নগরীর শাহজালাল সেতু  থেকে দক্ষিণ সুরমার কুচাই পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকাজুড়ে কিছু দিন আগেও  জেগে ছিলো বিশাল চর।
উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষকালে বরাক থেকে আসা পানির মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ সুরমায় প্রবেশ করে। আর অন্যান্য  মৌসুমে পানি প্রায় প্রবেশ করে না বললেই চলে, সব পানি চলে যায় কুশিয়ারায়। ফলে বছরের প্রায় আট মাসই পানি শূন্য থাকে সুরমা। 

এই সময় কানাইঘাটের লোভা পর্যন্ত পুরো নদী হয়ে পড়ে মৃতপ্রায়। পানি শূন্যতার কারণে নদীর বিভিন্ন অংশে অসংখ্য চর জেগে ওঠে। নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ায় এ অঞ্চলের কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবীরা বিপাকে পড়েছেন। কমে এসেছে ফসল উৎপাদন। সেচের অভাবে অনেক জমিতেই এখন উৎপাদন আর আগের মতো হয় না।

সওার আলী নামে এক কৃষক জানান, আগে শুষ্ক মৌসুমেও নদীতে ব্যবহারযোগ্য পানি পাওয়া যেতো এখন পানি না পাওয়ায় তাদের কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে এতে প্রভাব পড়ছে তাদের জীবিকার উপর, আবার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই নদী ভরে বন্যা দেখা দেয়। এছাড়া উৎসমুখে পলি জমায় দিন দিন নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, একাধিক প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আছে, কিন্তু এই নদী ভারত থেকে এসেছে। প্রথম দিকের ২৫ কিলোমিটার সীমান্ত লাইন দিয়ে গেছে। ফলে নদী খননের জন্য যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে উদ্যোগ নিতে হবে।

কয়েক মাস আগে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে সিলেটে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছিলেন, সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেট অঞ্চলের ছোট-বড় নদ-নদীসমূহ খননের একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই ড্রেজিং শুরু হবে। নদ-নদীর নাব্যতা ঠিক রাখতে সারাদেশে ৯টি ড্রেজিং স্টেশন স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে ছিলেন তিনি। ড্রেজিংকে একটি ব্যয় বহুল কাজ উল্লেখ করে ওই প্রতিমন্ত্রী তখন বলেন, ড্রেজিংয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয়। উজানের পানির সাথে বিপুল পরিমাণ পলিমাটিও আসে। যে কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। যে কারণে দুই বছর পর পর নদী ড্রেজিং করতে হয়। তলদেশে প্লাস্টিক থাকায় সুরমা নদীতে চলমান ড্রেজিং ব্যাহত হচ্ছে বলে মস্দব্য করেন ওই প্রতিমন্ত্রী।

বিআইডব্লিউটিএর তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদী, কুশিয়ারা নদী, কালনী নদী, যাদুকাটা নদী, রক্তি নদী, বৌলাই নদী, মনু নদী, পুরাংগী নদী, জুমনাল খাল নদী, খোয়াই নদী, সুতাং নদী, বেলেশ্বরি খাল নদী, তিতাস নদী, পাগলা নদী, বুড়ি নদী, মোগড়া নদী, কংশ নদী ও আপার মেঘনা নদী খননের লক্ষ্যে ২০২০ সালে বিআইডব্লিউটি’র বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা সরেজমিনে স্টাডি করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করেন। এরপর ২০২১ সালে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়। পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি সংশোধন করে দিতে কিছু নোট দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ- তে ফেরত পাঠায়। ২০২২ সালের শুরুর দিকে সংশোধন করে পুনরায় প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে আবার প্রকল্পটি সংশোধন করতে বিআইডব্লিউটিএতে ফেরত আসে। এরপরে আবারও বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পটি তৈরি করে তা অনাপত্তিপত্রের জন্যে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠান। যা এখনো ছাড়পত্রের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

আরও খবর

news image

থাইল্যান্ডের নারী এলেন বিয়ে করতে, হলেন ধর্ষণের শিকার!

news image

শরীয়তপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০

news image

বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রায়পুরায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন

news image

সালথায় বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

news image

চট্টগ্রামে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর

news image

বাঞ্ছারামপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

news image

পাঁচবিবিতে প্রকল্পের নামে জমি দখলের পায়তারা: দুদকে অভিযোগ

news image

চট্টগ্রামে এখন রাশিয়ার ৩ যুদ্ধজাহাজ

news image

'পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়'

news image

রায়পুরায় ইউপি সদস্যকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

news image

গাজীপুরে কৃষক দল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

news image

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে অভিযান, ১৭ বন্যপ্রাণী জব্দ

news image

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি: হচ্ছে না ভোট, বিএনপি-জামায়াতের পদ ‘ভাগাভাগি’

news image

ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে নোয়াখালী শহরে বিক্ষোভ

news image

পুকুর পাড়ে পড়েছিল বস্তাবন্দী খণ্ড-বিখণ্ড ৩ মরদেহ

news image

আখাউড়ায় ট্রেনে তেলচুরি: চালক ও পরিচালকসহ ৮ জনের নামে মামলা

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আড়াই হাজার কৃষক পেলেন বিনামুল্যের সার-বীজ

news image

সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে বাংলাদেশির মৃত্যুর অভিযোগ

news image

বান্দরবানের পাহাড় থেকে ৯ জনকে অপহরণ

news image

সরাইলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ আহত অর্থ শতাধিক

news image

নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার

news image

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল পঞ্চগড়

news image

ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনভর বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ

news image

মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে প্রতিবাদে উত্তাল গাজায় গনহত্যা বিক্ষোভ

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ১১ সদস্যে বিশিষ্ট কমিটি গঠন

news image

ঢাকায় গাজার সমর্থনে বিক্ষোভ ও সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গঙ্গাস্নানে উপচেপড়া ভীড়

news image

চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা বিএনপির

news image

কুমিল্লা থেকে শুরু হয় ধাওয়া, নোয়াখালীর সুধারাম থানায় রক্ষা