বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

চট্টগ্রামে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার

কেবি ১৫ সেপ্টেম্বার ২০২৪ ০২:০২ পি.এম

চট্টগ্রামে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের ২৬টি পাহাড়ে প্রায় ছয় হাজার ৫৫৮টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। এই ২৬টি পাহাড়ের মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ১৬টি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন রয়েছে ১০টি। এসব পাহাড়ে অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। প্রতিবছর বর্ষাকালে এসব পাহাড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবু দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অনেকটাই নীরব।

জেলা প্রশাসনের হিসাবে, ২৬টি পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাস করছেন। এসব পাহাড়ের মধ্যে সাতটি রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রামের মালিকানাধীন। সেই পাহাড়গুলোর মধ্যে পলিটেকনিক হল্ট স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ১২টি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে পাঁচটি, ষোলোশহর স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৭৪টি, ফয়’স লেক এলাকার ১, ২, ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়ে চার হাজার ৪৭৬টি, মতিঝর্ণা ও বাটালী হিলসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩১টি, পরিবেশ অধিদপ্তরসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৬টি এবং লেকসিটি আবাসিক এলাকাসংলগ্ন বিজয় নগর পাহাড়ে ২৮৮টি পরিবার বসবাস করছে।

গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর মালিকানাধীন বাটালী হিল ও মতিঝর্ণা অংশের পাহাড়ে বাস করছে ৮৮টি পরিবার। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেটসংলগ্ন পাহাড় ও কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেটসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে বাস করছে যথাক্রমে ৪৯ ও ১৪৬টি পরিবার। এছাড়া ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত তিন পাহাড়ের উত্তর পাহাড়তলী মৌজার ১৫০ দাগের পাহাড়ে (জয়ন্তিকা আবাসিকসংলগ্ন) ২৮টি, বিএস ২১২ ও ২১৩ দাগের পাহাড়ে (মুরগি ফার্ম হয়ে গার্ডেন ভিউ সোসাইটিসংলগ্ন) ১২টি এবং আকবর শাহ বেলতলী পাহাড়ে ৮৯টি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

অন্যদিকে এপিভুক্ত (পরিত্যক্ত সম্পত্তি) পলিটেকনিক কলেজসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩টি এবং ভিপিভুক্ত (অর্পিত সম্পত্তি) লালখানবাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসাসংলগ্ন পাহাড়ে ৩২৩টি পরিবার বসবাস করছে। বাকি ১০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়ের মধ্যে হারুন খান সাহেবের পাহাড়ে ১৪৪টি, নাছিয়াঘোনা এলাকার পাহাড়ে ১২টি, চিড়িয়াখানার পেছনের পাহাড়ে ২৮টি, মধুশাহ পাহাড়ে ২৯টি, জালালাবাদসংলগ্ন পাহাড়ে পাঁচটি, নাগিন পাহাড়ে ২৫টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন মীর মোহাম্মদ হাসানের পাহাড়ে ৩৮টি, এমআর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৪২টি, মিয়ার পাহাড়ে ৪৯টি এবং ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে (রৌফাবাদ, অক্সিজেন) ১১টি পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানমতে, চট্টগ্রাম নগরে ২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে মারা যান ১২৭ জন। এর মধ্যে লালখানবাজার ওয়ার্ডের মতিঝর্ণা এলাকায় মারা যান ১১ জন। ২০০৮ সালে ১২ জন, ২০১১ সালে ১৭ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন, ২০১৩ সালে দুজন, ২০১৫ সালে পাঁচজন, ২০২২ সালে চারজন ও ২০২৩ সালে দুজন নিহত হন।

জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে রীতিমতো বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করেই দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ। পানির সংযোগও রয়েছে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিটি সভায় সেবা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা

বিভিন্ন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়ন করা হয় না। ফলে দিনের পর দিন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে শক্ত অবস্থান গাড়েন অবৈধ বাসিন্দারা। প্রতিবছর পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে এসব বসতঘরে। প্রাণ হারানোর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয় মাইকিং। ডাকা হয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা। এরপর পাহাড় থেকে সরিয়ে দেয়া হয় অবৈধ বসবাসকারীদের। কিন্তু বৃষ্টি থামলে আবার পাহাড়ে বসতি গাড়েন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০০৭ সালের ভয়াল ঘটনার পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব ছিল বিশেষজ্ঞ কমিটির দেয়া ৩৬ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পাহাড় কাটা বন্ধ করে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা। তবে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি কেবল বর্ষা মৌসুমে সভা করে দায় সারে। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে কিছু কাজও হয়। কিন্তু এরপর দীর্ঘ ঘুমে চলে যায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি! আর এই সুযোগে পাহাড়ে নতুন করে বসতি স্থাপন চলে। এসব পাহাড়ে বসবাসকারীদের পরিষেবা দেন সরকারি তিন সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারাই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ঘুষের বিনিময়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেন। এই পাহাড়গুলোর বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে প্রশাসন চাইলেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরাতে পারে না।

এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে, সবগুলো ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া এসব সেবা সংস্থার প্রধানদের ১৫ দিন পরপর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জানাতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

চার জেলায় দুপুরের মধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস

news image

খুলনায় আটক হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

news image

দিনাজপুরে গ্রেপ্তার হলেন গাইবান্ধার সাবেক এমপি

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবের উদ্বোধন

news image

গৃহবধূর লাশ হাসপাতালে রেখে পালালেন শশুর বাড়ির লোকজন

news image

থাইল্যান্ডের নারী এলেন বিয়ে করতে, হলেন ধর্ষণের শিকার!

news image

শরীয়তপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০

news image

বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রায়পুরায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন

news image

সালথায় বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

news image

চট্টগ্রামে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর

news image

বাঞ্ছারামপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

news image

পাঁচবিবিতে প্রকল্পের নামে জমি দখলের পায়তারা: দুদকে অভিযোগ

news image

চট্টগ্রামে এখন রাশিয়ার ৩ যুদ্ধজাহাজ

news image

'পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়'

news image

রায়পুরায় ইউপি সদস্যকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

news image

গাজীপুরে কৃষক দল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

news image

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে অভিযান, ১৭ বন্যপ্রাণী জব্দ

news image

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি: হচ্ছে না ভোট, বিএনপি-জামায়াতের পদ ‘ভাগাভাগি’

news image

ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে নোয়াখালী শহরে বিক্ষোভ

news image

পুকুর পাড়ে পড়েছিল বস্তাবন্দী খণ্ড-বিখণ্ড ৩ মরদেহ

news image

আখাউড়ায় ট্রেনে তেলচুরি: চালক ও পরিচালকসহ ৮ জনের নামে মামলা

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আড়াই হাজার কৃষক পেলেন বিনামুল্যের সার-বীজ

news image

সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে বাংলাদেশির মৃত্যুর অভিযোগ

news image

বান্দরবানের পাহাড় থেকে ৯ জনকে অপহরণ

news image

সরাইলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ আহত অর্থ শতাধিক

news image

নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার

news image

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল পঞ্চগড়

news image

ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনভর বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ

news image

মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে প্রতিবাদে উত্তাল গাজায় গনহত্যা বিক্ষোভ