শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

ভগবান যুগে যুগে-বহুরুপে অত্যাচারীর বিনাশে

কেবি ২৬ আগষ্ট ২০২৪ ০১:৫৮ পি.এম

অশুভ বিনাশ করতে তিনি আবির্ভুত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

অলোক আচার্য

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবত গীতা। আর গীতার প্রাণ পুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সনাতন বা হিন্দু ধর্মের প্রাণপুরুষ হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি দ্বাপর যুগে মানব জাতিকে পথ দেখাতে, অশুভ বিনাশ করতে তিনি আবির্ভুত হয়েছিলেন। তিনিই গীতায় বলেছেন, যখন যখন পৃথিবীতে অধর্মের বৃদ্ধি পায় তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে আসেন পাপীদের বিনাশ করতে এবং সাধুদের উদ্ধার করতে। মানুষ জানতে চায় ভগবানের উৎস। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন এবং ধর্ম রক্ষার লক্ষ্যে মহাবতার ভগবান রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। ভগবান বিষ্ণুর এক অবতার শ্রী কৃষ্ণ। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের সারথী হয়ে তিনি পাপীদের বিনাশ করেন এবং সাধুদের রক্ষা করেছেন। দ্বাপর যুগে কংস ছিল ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মামা। তার নিজের বোন এবং তার স্বামীকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছিলেন কেবল অত্যাচারী দুরাচারী আর পাপাচারী কংসের জীবনাবসান হবে তারই বোনের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া অষ্টম সন্তানের হাতে। প্রবাদে আছে কংস মামা। এই কংস মামার অর্থ হলো, এমন আত্মীয় যিনি সর্বদাই ক্ষতির চিন্তায় মগ্ন থাকেন। কংস তার আপন ভাগ্নেকে হত্যার অসংখ্য প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে সেই প্রবাদের সূচনা করেন। যেদিন কংস তার ভগ্নী দেবকীকে বিয়ে দিয়ে রথে চড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সেদিনই আকাশ থেকে দৈব বাণী হয়। সেই দৈব বাণীতে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তারই ভগ্নীর সন্তানকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই দৈব বাণী শোনার পর থেকেই মৃত্যুভয়ে ভীত কংস তার সদ্য বিবাহিত বোন ও বোনের স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন এবং একে একে সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যা করতে থাকেন। তবে সপ্তম সন্তানের ক্ষেত্রে ঘটল এক অপূর্ব ঘটনা যা কংসকে আরও ভীত করে তোলে। কারাগারের রক্ষকগণ নবজাতকের ক্রন্দন শুনে কংসকে সংবাদ দিলেন। এই পুত্রের জন্মের জন্য কংস তৎক্ষানাৎ কারাগারে ছুটে আসেন। 

কংসকে দেখে ভগ্নী দেবকী করুণ ভাবে পায়ে ধরে বললেন, একে বধ করবেন না। এর আগে আপনি আমার সাত পুত্র বধ করেছেন। এটি কন্যা সন্তান। আমার এই শেষ সন্তান, একে ভিক্ষা দিন। কংস নবজাতিকাকে হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পা দু’টি ধরে সজোরে পাথরের উপর নিক্ষেপ করেন। তৎক্ষণাৎ কৃষ্ণের অনুজা সেই কন্যা কংসের হাত থেকে মুক্ত হয়ে অষ্টভূজা দেবী মূর্তিতে আকাশ মার্গে গমন করলেন। আট হাতে ধনু, শ্লূ, বান, চর্ম, অসি, শঙ্খ, চক্র, গদা ধারণ করে কংসকে বললেন, ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে’। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন দেবী মহামায়া। এই কথা বলেই দেবী অন্তর্হিত হন। এরপর আসে সেই শুভ ক্ষণ। প্রকৃতিও তখন ভগবানের আদেশে তার আগমনের অপেক্ষায়। আর কংসের মৃত্যুর দিন গণনার শুরু। দেবতারা উপর থেকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। কংস জানতেও পারল না তার অগোচরে ভগবান জন্ম নিয়ে তাকে বধ করতে আসবে। ভাদ্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টমী তিথির রাতে অষ্টম সন্তানের জন্ম দেন দেবকি। সে রাত ছিল ঝড়-ঝঞ্চাপূর্ণ। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কারাগারের ফটকে কোনো রক্ষী সে সময় পাহারায় ছিল না। দেবকীর কোল আলো করে জন্ম নেন যুগাবতার ভগবান শ্রী কৃষ্ণ। এমন সময় এক দৈববাণীতে সদ্যোজাত ছেলেসন্তানকে নিরাপদে গোকুলে নন্দ-যশোদা দম্পতির কাছে রেখে আসতে বলা হয়। এ সময় কারাগারের দরজাও খুলে যায়। ফলে বসুদেব ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছেলেকে নিয়ে গোকুলে যশোদার পাশে রেখে আসেন। বিশাল যমুনা সেই ঝড়-ঝঞ্জার রাতে পায়ে হেঁটে পার হয়ে গোকুলে পৌছে যান পিতার মাথায় চড়ে। আসলে এসব ছিল ভগবানের পূর্ব নির্ধারিত। ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে আসেন যশোদার সদ্যোজাত মেয়েকে। পরে গোকুলেই বড় হতে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ। 

পরবর্তী সময়ে দ্বারকার রাজা হয়ে তিনি যুদ্ধে মথুরারাজ কংসকে পরাজিত ও হত্যা করেন। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কংসকে বধ করার আগে অর্থাৎ শিশু কালেই পুতনা রাক্ষসী সহ অসংখ্য রাক্ষসকে বধ করে ব্রজবাসীকে উদ্ধার করেছিলেন। কংসের শত চেষ্টা ব্যর্থ করেছিলেন। ব্রজবাসীগণ মহানন্দে নন্দ উৎসব করতে লাগল। ব্রজের গোপগণ আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। কৃষ্ণের জন্ম সংবাদে আকাশ বাতাস, জল, পশু, পাক্ষী, বাগানের পুষ্প সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠল। গোটা ব্রজবাসীর ঘরে আনন্দের প্লাবন বয়ে গেল। সেই থেকে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ভাদ্র মাসের শুক্লা অষ্টমীতে জন্মাষ্টমী পালন করে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তারা বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়, তখনই ধর্ম সংস্থাপনের জন্য ভক্তের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ঈশ্বর অবতার রূপে পৃথিবীতে আসেন। ষড়গুণ অর্থাৎ শৌর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন পূর্ণাবতাররূপে প্রকাশিত হন কৃষ্ণ। নিজের জন্ম নিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ‘আমার জন্ম-মৃত্যু সাধারণ মানুষের মতো নয়। মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং মারা যায়, কিন্তু আমি জন্মরহিত হয়েও আবির্ভূত হই এবং অবিনশ্বর হয়েও অন্তর্ধান করে থাকি। আবির্ভূত হওয়া এবং অন্তর্হিত হওয়া-দুটিই আমার অলৌকিক লীলা।’গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন, ‘আমি জন্মহীন, অব্যয় আত্মা, ভূতগণের ঈশ্বর হয়েও নিজ প্রতীকে আশ্রয় করে আত্মমায়ায় জন্মগ্রহণ করি।’

যিনি সর্বাপেক্ষা বৃহৎ, তিনিই ভগবান। বেদে তার পরিচয় ব্রহ্ম। আমাদের ষড় ইন্দ্রীয়, আমাদের ক্ষুদ্র মন, আমাদের সংকীর্ণ বুদ্ধি এসবের বহু ঊর্ধ্বে তিনি। তাকে পাওয়া আমাদের সাধ্যের বাইরে, তবে তাকে পাওয়ার জন্য ভক্তের নিরন্তর আকুলতা সৃষ্টিকর্তার মনেও দোলা না দিয়ে পারে না। এ সমস্যার সমাধান করলেন তিনি নিজেই নিত্য ও অনুগ্রহ শক্তির প্রেরণায়। গীতার ৭/১০ অধ্যায়ে অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ‘হে পার্থ, আমাকে সর্বভূতের সনাতন বীজ বলিয়া জানিও। আমি বুদ্ধিমানদিগের বুদ্ধি এবং তেজস্বীগণের তেজস্বরূপ।’ ৪/১১ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ‘যে যেভাবে আমায় আরাধনা করে, আমি সেইভাবে তাহাকে কৃপা করি।’ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ পৃথিবীতে এসেছেন বারবার। এসেছেন মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে। পূণ্যতিথিতে সকল মানুষের উচিত শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে কৃষ্ণ সাধনা করা, নিষ্কাম ভাবে তাঁকে ডাকা। বর্তমানে মানুষ কিছু স্বার্থ নিয়ে ডাকে, স্বার্থপূরণ না হলে সেই সব মানুষের কাছে ভগবান মিথ্যা হয়ে যায়। মানুষ ত্রিগুণ সম্পন্ন জীব। সত্তঃগুণ, রজোঃগুণ এবং তমোগুণ। তন্মোধ্য তামসিক গুণ সম্পন্ন মানুষ সর্বাধিক পাপকর্মে পতিত হন। ভগবান বলেছেন, কাম, ক্রোধ ও লোভ এই তিন হলো নরকের দ্বার। সুতরাং এই তিন থেকে মানুষকে দূরে থাকতে হবে। যদিও মানুষ এই তিন থেকে দূরে থাকতে পারে না। তবে এই পাপ যখন সব মাত্রা অতিক্রম করে তখনই ভগবান ভক্তকে রক্ষা করতে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। কারণ ভক্তের ভগবান। ভক্তের ডাক ভগবান কখনোই উপেক্ষা করতে পারেন না। যেখানেই ভক্ত সেখানেই ভগবান। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। ভগবানের আবির্ভাবের এই পূণ্য তিথিতে পৃথিবীর সকল মানুষ ও প্রাণীর মঙ্গল হোক।

আরও খবর

news image

দুর্ঘটনায় উড়ে গেল ছাদ, বাসচালক তবুও লা-পরোয়া

news image

টানা বৃষ্টিতে বরিশাল নগরীতে জলাবদ্ধতা

news image

আজ সকাল ৯টার মধ্যে ১৮ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়

news image

‘আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা করছে সরকার’

news image

চীনের প্রস্তাবিত হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হওয়ার দাবি

news image

গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ: মারা গেলেন স্বামী, আশঙ্কাজনক স্ত্রী-ছেলে

news image

দর্শনা চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ

news image

৪ দিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা, চলবে তাপমাত্রা ওঠানামা

news image

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ও ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

news image

সরাইলে মাদক সেবনের দায়ে যুবকের কারাদণ্ড

news image

‘ইতিহাস কখনো মোছা যায় না’

news image

মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে আগামী চার দিন

news image

কসবায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দু'জন নিহত

news image

ঝিনাইগাতীতে নিহত দুইজনের পরিবারের পাশে ইউএনও

news image

চার জেলায় দুপুরের মধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস

news image

খুলনায় আটক হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

news image

দিনাজপুরে গ্রেপ্তার হলেন গাইবান্ধার সাবেক এমপি

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবের উদ্বোধন

news image

গৃহবধূর লাশ হাসপাতালে রেখে পালালেন শশুর বাড়ির লোকজন

news image

থাইল্যান্ডের নারী এলেন বিয়ে করতে, হলেন ধর্ষণের শিকার!

news image

শরীয়তপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০

news image

বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রায়পুরায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন

news image

সালথায় বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

news image

চট্টগ্রামে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর

news image

বাঞ্ছারামপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

news image

পাঁচবিবিতে প্রকল্পের নামে জমি দখলের পায়তারা: দুদকে অভিযোগ

news image

চট্টগ্রামে এখন রাশিয়ার ৩ যুদ্ধজাহাজ

news image

'পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়'

news image

রায়পুরায় ইউপি সদস্যকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন