বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ একরামের স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলেছেন দুই মন্ত্রী 

কেবি ১৮ আগষ্ট ২০২৪ ০৯:২৯ পি.এম

বন্দুকযুদ্ধে নিহত একরাম একরামের স্ত্রী

মোহাম্মাদ ইউনুছ অভি, টেকনাফ প্রতিনিধি : ‘আমার স্বামী মাদক ব্যবসার সঙ্গে কখনও জড়িত ছিলেন না। তবু মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। কী অপরাধ ছিল তার? মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই? কেন এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো? ছয় বছরের বেশি সময় কেটে গেলো, কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি। আজ পর্যন্ত ভয়ে বিচার চাইতে পারিনি। মামলাও করিনি। বিভিন্ন সময় নানাভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। দুই জন মন্ত্রী ফোন করে আমাকে চুপ থাকতে বলেছিলেন। তাই চুপ হয়ে বসেছিলাম। তবে এই অবিচারের কথা ভুলিনি, কখনও ভুলবো না। হত্যাকাণ্ডের বিচার আমৃত্যু চেয়ে যাবো। এখন ভয় কেটে গেছে। এবার মামলা করবো।’

কথাগুলো বলেছেন র‍্যাবের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম। ২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে নিহত হন একরাম। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও বিচারের অপেক্ষায় দিন পার করছে তার পরিবার। ঘটনার সময় একরাম টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। ১২ বছর ছিলেন টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।

বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকালে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়ায় একটি দোতলা বাড়ির জরাজীর্ণ কক্ষে এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় আয়েশার। কক্ষটির দেয়ালে মার্কার কলমে লেখা আছে, ‘মানুষ মানুষকে গুলি করে মারে’, ‘নির্দোষ মানুষ কেন মরে’, ‘আব্বু তুমি বাড়িতে কবে আসবা’, ‘আমাদের আব্বু হত্যার কি কোনও বিচার পাবো না?’—এমন নানা কথা। স্কুলপড়ুয়া তাহিয়াত হক ও নাহিয়ান হক তাদের বাবা একরামুল হক হত্যার বিচার চেয়ে দেয়ালে নানা প্রশ্ন লিখেছে। যা আজও নানা প্রশ্ন তৈরি করে রেখেছে।

আজও স্বামী হারানোর শোক ভুলতে পারেননি আয়েশা

স্বামী মারা গেছে আজ ছয় বছর দুই মাস ১৯ দিন হয়েছে উল্লেখ করে আয়েশা বেগম বলেন, ‘এখনও বিচারের অপক্ষোয় আছি। তখন হুমকি ও ভয়ের কারণে মামলা করতে পারিনি। এখন আমার ভয় কেটে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ায় বিচার পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছি। এই সরকারের সহায়তায় আমি এবার স্বামী হত্যার মামলা করতে চাই। যাতে স্বামী হত্যার বিচার পাই।’

এর আগে অনেকে বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কেউ কথা রাখেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামীকে হত্যার পর আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায়, মামলা করতে চাওয়ায় আমাদের পরিবারকে অনেক হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বিচার চাওয়ার কথা বললে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (সাবেক) আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করেছিলেন। এই দুই মন্ত্রী আমাকে গণমাধ্যমের সঙ্গে যেন কথা না বলি সেটা বলে দিয়েছিলেন। আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, “চুপ থাকেন, আমরা আপনার দাবির বিষয়টি দেখছি।” কিন্তু পরে কিছুই হয়নি। এই হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচিত। শেখ হাসিনার নজরে এলেও কোনও পদক্ষেপ নেননি। এই হত্যার দায় কি তিনি এড়াতে পারেন। পারেন না। কারণ আমার স্বামী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। দলের একজন কর্মীকে এভাবে হত্যার পরও কোনও ব্যবস্থা নেননি তিনি। এমনকি মামলা পর্যন্ত করতে পারিনি আমি। এতটি বছর কেটে গেলো। কেউ খোঁজ নেয় না, কীভাবে আমি আমার সংসার চালাচ্ছি। আমার দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।’

তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে র‌্যাব জড়িত। তখন র‌্যাব ও ডিজিএফআইয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা যারা ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় আনা গেলে এই হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশের পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হলে হত্যা মামলা করবো। বর্তমানে দুই মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি। বৃষ্টি হলে এই ঘরে পানি পড়ে। ঘুমানো কষ্টকর। তবু কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আমাদের।’

স্বামীর স্মৃতিচারণ করে অশ্রুভেজা চোখে আয়েশা বলেন, ‘হত্যার পর ঘটনাস্থলে পাওয়া স্বামীর চশমাটি একজন বৃদ্ধ লোক এসে একদিন বাসায় দিয়ে গেছেন। সেই চশমায় এখনও রক্তের দাগ লেগে আছে। এর চেয়ে বেদনার কী হতে পারে। প্রতিদিন স্বামীসহ আমরা চার জন একসঙ্গে খেতে বসতাম। কিন্তু এখন খাওয়ার সময় তার কথা খুব মনে পড়ে খুব। তার পছন্দের খাবারগুলো রান্না করলে তাকে মনে পড়ে। এমনকি মেয়েরা তাদের বাবার পছন্দের কোনও খাবার রান্না করলে কান্না করে, কষ্ট পায়। কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি আমরা।’

এখন দুই মেয়ে বড় হয়েছে, তারাও বাবা হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করতে চায় উল্লেখ করে আয়েশা বলেন, ‘যারা মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেছিল তাদেরও বিচার হওয়া উচিত। যাতে আর কোনও নিরীহ মানুষ এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি, যেহেতু সবকিছু নতুন করে শুরু হয়েছে, সেহেতু এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হোক। মামলার ব্যাপারে এই সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাই আমি। আশা করছি, এই সরকারের কাছে আমি স্বামী হত্যার বিচার পাবো।’

২০১৮ সালের ৪ মে দেশজুড়ে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান। ওই বছরের ২৬ মে রাতে টেকনাফে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন একরাম। তার বাবার রেখে যাওয়া ৪০ বছরের পুরোনো বাড়ির এক কক্ষে থাকতেন। ব্যাংকে টাকাপয়সা নেই, ধারদেনা করে পৈতৃক ভিটায় বাড়ি তোলার কাজ শুরু করেছিলেন, শেষ করতে পারেননি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার চাপে সেদিন সন্ধ্যায় যখন বের হন, তখন মোটরসাইকেলে তেল ভরার মতো টাকা ছিল না। বাসার উল্টো দিকের একটি হোটেলের ম্যানেজারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার করে বেরিয়েছিলেন।

একরামের স্বজনরা জানান, হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে টেকনাফে গুজব ছড়িয়েছিল, একরামুল ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। ঘটনার দিন একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অনবরত একরামুলকে বিরক্ত করছিলেন। বারবার বলছিলেন, একরামুল যেন তাদের একখণ্ড জমি কেনায় সহযোগিতা করেন। তাদের চাপাচাপিতেই একরামুল বাধ্য হয়ে বাসা থেকে বের হন। জমির বিষয়টা ছিল অজুহাত।

স্কুলপড়ুয়া তাহিয়াত হক ও নাহিয়ান হক তাদের বাবা একরামুল হক হত্যার বিচার চেয়ে দেয়ালে নানা প্রশ্ন লিখেছে


শেষ কথোপকথনে যা ছিল

হত্যাকাণ্ড ঘটার সময় মেয়েদের সঙ্গে একরামুল হকের কথোপকথন শোনা যায় ফোনে থেকে যাওয়া রেকর্ডে। একরামের প্যান্টের পকেটে থাকা ফোনে মেয়ে ফোন করলে চাপ পড়ে রিসিভ হয়ে যায়। একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগমের মুঠোফোনে রেকর্ড হয়ে যায় গুলির শব্দ, শোরগোল। এই অডিও ভাইরাল হলে ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে তখন।

একরাম যে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন, তার পাঁচ দিন পর আয়েশা কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলন করে একরামের সঙ্গে তার ও মেয়েদের শেষ কথোপকথনের অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেন। এর একটি অংশ ছিল এ রকম:

মেয়ে: হ্যালো আব্বু!

একরাম: জি আম্মু। আম্মু আমি হ্নীলা যাচ্ছি।

মেয়ে: কেন?

একরাম: জরুরি কাজে যাচ্ছি। ...মেয়ে আবার জিজ্ঞাসা করে, কেন?

একরাম: যাচ্ছি আম্মু...(কান্নার স্বরে কথা)।

মেয়ে: যাচ্ছ; তুমি কান্না করতেছ যে...?

এর কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ ও গোঙানির আওয়াজ শোনা যায়।

এই অডিও অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বাবা-মেয়ের শেষ কথোপকথন শুনে এবং একরাম নিহত হওয়ার খবরটি জেনে মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। শুরু হয় সমালোচনা।

আরও খবর

news image

দিনাজপুরে গ্রেপ্তার হলেন গাইবান্ধার সাবেক এমপি

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবের উদ্বোধন

news image

গৃহবধূর লাশ হাসপাতালে রেখে পালালেন শশুর বাড়ির লোকজন

news image

থাইল্যান্ডের নারী এলেন বিয়ে করতে, হলেন ধর্ষণের শিকার!

news image

শরীয়তপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০

news image

বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রায়পুরায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন

news image

সালথায় বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০

news image

চট্টগ্রামে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর

news image

বাঞ্ছারামপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

news image

পাঁচবিবিতে প্রকল্পের নামে জমি দখলের পায়তারা: দুদকে অভিযোগ

news image

চট্টগ্রামে এখন রাশিয়ার ৩ যুদ্ধজাহাজ

news image

'পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়'

news image

রায়পুরায় ইউপি সদস্যকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

news image

গাজীপুরে কৃষক দল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

news image

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে অভিযান, ১৭ বন্যপ্রাণী জব্দ

news image

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি: হচ্ছে না ভোট, বিএনপি-জামায়াতের পদ ‘ভাগাভাগি’

news image

ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে নোয়াখালী শহরে বিক্ষোভ

news image

পুকুর পাড়ে পড়েছিল বস্তাবন্দী খণ্ড-বিখণ্ড ৩ মরদেহ

news image

আখাউড়ায় ট্রেনে তেলচুরি: চালক ও পরিচালকসহ ৮ জনের নামে মামলা

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আড়াই হাজার কৃষক পেলেন বিনামুল্যের সার-বীজ

news image

সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে বাংলাদেশির মৃত্যুর অভিযোগ

news image

বান্দরবানের পাহাড় থেকে ৯ জনকে অপহরণ

news image

সরাইলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ আহত অর্থ শতাধিক

news image

নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার

news image

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল পঞ্চগড়

news image

ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনভর বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ

news image

মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে প্রতিবাদে উত্তাল গাজায় গনহত্যা বিক্ষোভ

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ১১ সদস্যে বিশিষ্ট কমিটি গঠন

news image

ঢাকায় গাজার সমর্থনে বিক্ষোভ ও সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান