মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

আয় ১২ লাখ, খরচ ৩৭ লাখ, কেন ক্ষতির সম্মুখীন বঙ্গবন্ধু টানেল?

নিউজ ডেক্স ০৯ জুন ২০২৪ ০১:৫৪ পি.এম

সংগৃহীত

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মূল দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এটি দেশের নদীর তলদেশের প্রথম টানেল। চীনা ঋণ ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এই টানেল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী যানবাহন চলছে না। ফলে টোল আদায় কম হচ্ছে। আয়ের চেয়ে টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় এখন পর্যন্ত বেশি।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) সূত্র জানিয়েছে, এ বছর থেকে টানেলের জন্য নেওয়া চীনা ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হবে। আয় কম হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অন্যান্য সেতুর আয় থেকে মেটাতে হবে। ফলে ঋণ পরিশোধে সরকারকে রাজস্ব খাত থেকে ভর্তুকি দিতে হবে। টানেল দিয়ে যানবাহনে কর্ণফুলী নদী পার হতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট সময় লাগছে। ফলে মানুষের চলাচল সহজ হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, টানেলের এক পাশে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি।

সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে টানেল দিয়ে এখন পর্যন্ত দিনে গড়ে সাড়ে চার হাজারের কিছু বেশি যানবাহন চলাচল করেছে। পূর্বাভাস ছিল, এর অন্তত চার গুণ যানবাহন চলবে। টানেল থেকে টোল বাবদ দৈনিক গড়ে আয় হচ্ছে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অন্যদিকে এই টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ দিনে ব্যয় গড়ে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৫ সালের নভেম্বরে ‘কনস্ট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ শীর্ষক টানেল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। তবে নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে।

চীনা ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ। এর সঙ্গে আছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৫ বছর। এর মধ্যে ঋণ নেওয়া ও কিস্তি শোধ শুরুর মধ্যকার বিরতি (গ্রেস পিরিয়ড) হিসেবে পাঁচ বছর সময় অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত প্রথম কিস্তি পাওয়ার পরের পাঁচ বছরকে গ্রেস পিরিয়ড ধরা হয়। চীনেরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) টানেলটি নির্মাণ করেছে। এখন তাদেরই পাঁচ বছরের জন্য টানেল রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। তাদের দিতে হবে ৯৮৪ কোটি টাকা।

চীনা ঋণ প্রকল্পের প্রধান শর্ত হলো, তাতে চীনা ঠিকাদার কাজ করবে, কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয় না। অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের শর্তের প্রকল্পে ব্যয় অনেক বেশি হয়। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঠিকাদারকে যে টাকা দেওয়া হবে, এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে স্ক্যানার কিনতে। রক্ষণাবেক্ষণে পাঁচ বছরে প্রকৃত ব্যয় ৬৮৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে রক্ষণাবেক্ষণের দৈনিক ব্যয় দাঁড়ায় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা।

বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারের মোট ব্যয় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। টানেল প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, ভারত ও চীনে অবকাঠামো নির্মাণে নিজেদের জনবল, যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ উপকরণের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে অনেক কিছুই আমদানি করতে হয়। এ জন্য খরচ বেশি পড়ে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে ব্যয় কমানো সম্ভব হতো। যদি কর্ণফুলী নদীতে ঝুলন্ত সেতু করা হতো, তাহলে অনেক কম টাকা খরচ হতো। এছাড়াও ২০২০ সালের জায়গায় টানেল চালু হয়েছে ২০২৩ সালে। সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে চালুর পর ৬ মে পর্যন্ত দিনে যানবাহন চলেছে গড়ে ৪ হাজার ৬১৩টি করে। টোল আদায় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। দিনে গড়ে আয় হয়েছে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। শুরুর চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যানবাহন চলাচল কমেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সরকারের সেতু বিভাগের অধীন সংস্থা সেতু কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির প্রকৌশলীরা বলছেন, টানেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর অনেক দিন হরতাল ও অবরোধ চলেছে। এ কারণে যান চলাচল কম হয়। কিন্তু দৈনন্দিন যানবাহন চলার প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরুতে টানেল দেখার জন্য অনেকে গাড়ি নিয়ে গেছেন। সাম্প্রতিককালে বরং যান চলাচল কমেছে।

সংস্থাটির সূত্র বলছে, টানেলটি দিয়ে ভারী যানবাহন বেশি চলাচল করবে বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেশি চলেছে ব্যক্তিগত গাড়ি বা প্রাইভেট কার। টানেল দিয়ে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ।

কর্ণফুলী টানেল হলে চীনের সাংহাই শহরের মতো চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনে’র মডেলে গড়ে তোলার পরিকল্পনা সরকারের। কিন্তু চট্টগ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে শহর সম্প্রসারণ বা সেখানে পরিকল্পিতভাবে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে সিডিএ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, টানেলের তখনই ভালো ব্যবহার হবে, যখন চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হবে। মেরিন ড্রাইভ হয়ে গেলে তখন এর পাশে নানা ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এসব কারখানার পণ্যবাহী যানবাহন টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচল করবে। যদি তা না হয়, টানেল একরকম অব্যবহৃত থেকে যাবে।

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

ড্রোন শো জানিয়ে দিল ইতিহাসের নানা পর্ব

news image

বাংলাদেশে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

news image

কারাগার থেকে গণহারে মুক্তি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি: আবু হানিফ

news image

হানাহানি চাই না, শান্তির দেশ চাই: সেনাপ্রধান

news image

বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহাল

news image

ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হল

news image

যার যার মত করে বৈশাখ উদযাপন করুন: প্রধান উপদেষ্টা

news image

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হলো ১৭ ঘণ্টা পর

news image

আদানির কেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধের কারণে লোডশেডিং বাড়তে পারে

news image

আমাদের হৃদয়ে বাস করে এক-একটা ফিলিস্তিন: মিজানুর রহমান আজহারী

news image

দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশ রয়েছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

news image

মার্চ ফর গাজা: লাখো মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হলো 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন'

news image

শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়েছে: ফারুকী

news image

অ্যামনেস্টি উদ্বেগ জানালো মেঘনা আলমকে নিয়ে

news image

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল

news image

সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুকে 'সর্বকালের সেরা বিদ্যুৎ চোর' বললেন সিদ্দিকী নাজমুল

news image

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

news image

এবার 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নয়, 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'

news image

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন লোগো প্রকাশ

news image

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল

news image

দেশে হুমকির মুখে নারীর অবস্থান ও নিরাপত্তা: মহিলা পরিষদ

news image

৬০ কি.মি. বেগে ঝোড়ো হাওয়া: চার অঞ্চলে সতর্কতা

news image

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে রপ্তানিতে কোন প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

news image

শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

news image

বিশ্বকে বদলে দেয়ার মতো দুর্দান্ত আইডিয়া আছে বাংলাদেশের কাছে: প্রধান উপদেষ্টা

news image

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ এপ্রিল বসছেন বিএনপি নেতারা

news image

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী শমী কায়সার

news image

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ আইনজীবীর ওপর ক্ষেপে গেলেন হাজী সেলিম

news image

‘এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনা, নিহত ৩২২ জন’

news image

কারামুক্ত হয়েই জনতার তোপের মুখে সাবেক এমপি আজিজ