রোববার ১৩ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

ব্যাংক খাত সংস্কারে পরামর্শ উপেক্ষিত অর্থনীতিবিদদের

নিউজ ডেক্স ০৩ জুন ২০২৪ ০৫:১৭ পি.এম

সংগৃহীত

অর্থনীতিবিদরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুশাসন ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন । সেসময় কোনো সাড়া না দিলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

গত বছরের ২১ জুন জাতীয় সংসদে নতুন আইন “ব্যাংক কোম্পানি ‘সংশোধন’ বিল ২০২৩” পাস হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু নির্দেশনা জারি করে। তবে ব্যাংক সংস্কারে অর্থনীতিবিদরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন নতুন আইনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপেও সেসব পরামর্শ উপেক্ষিত থেকে গেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুশাসনের ঘাটতি এবং নীতিগত দুর্বলতার কারণে দেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিপুল পরিমাণ ঋণখেলাপি হয়ে পড়া ও পরিচালনাগত অদক্ষতার কারণে ব্যাংকগুলো আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে একরকম গোষ্ঠীতন্ত্র (অলিগার্কি) তৈরি হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকেও সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা প্রভাব বিস্তার করছে, যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নাই। ফলে একদিকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংক খাতের প্রতি সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যদিও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) হিসাবে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃতপশিল, আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও অবলোপন করা ঋণ বাদ দিয়ে খেলাপির পরিমাণ হিসাব করে।

এদিকে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক সিদ্ধান্ত আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করছে। ফলে তারা ব্যাংকে রাখা আমানত তুলে নিচ্ছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক ব্যাংক এখন ধার করে চলছে। গত কয়েক দিনের তথ্যে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫টি ব্যাংক এবং ৫ থেকে ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার করছে। অন্যদিকে চলতি হিসাব ঋণাত্মক থাকার পরও শরীয়াভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় ধার দিচ্ছে।

তীব্র হয়ে ওঠা তারল্য সংকট কাটাতে আবারও ব্যাংক খাত সংস্কারের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘তারল্য সংকট কাটাতে কী করা যায়—তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক কোম্পানি আইনে মোটা দাগে তিনটি বড় পরিবর্তন করা হয়েছে, যার একটিও প্রকৃতপক্ষে আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। এর পাশাপাশি ব্যাংক পরিচালনায় সুশাসনও নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রথমত, অর্থনীতিবিদরা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদকে পরিবারতন্ত্র থেকে বের করার পরামর্শ দিয়েছিলেন; কিন্তু নতুন আইনে এক পরিবারের চারজনকে পরিচালক হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যদিও সর্বশেষ এই সংখ্যা একজন কমিয়ে ৩ করা হয়েছে। অথচ আগে এক পরিবার থেকে এক সঙ্গে দুজনের বেশি পরিচালক হতে পারতেন না। শুধু তাই নয়, তারা এখন অব্যাহতভাবে ১২ বছর পরিচালক থাকতে পারবেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে পরিবারতন্ত্র বা পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানো হয়েছে। এতে একই পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে ইচ্ছামতো ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করবে। ফলে সেখানে একনায়কতন্ত্র তৈরি হবে।’

অন্যদিকে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ বা আর্থিক সুবিধা বা তার ওপর আরোপিত সুদ পরিশোধ না করেন, তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের কোনো সদস্যের নামে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করলে সেটিও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। এক উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করলে সেটিই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলে গণ্য হবে।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিকাংশ আইনই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের পক্ষে রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইনে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঋণ ছাড় করার পর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত করা হবে; কিন্তু একজন খারাপ উদ্যোক্তা যাতে ব্যাংক থেকে কোনো অবস্থাতেই ঋণ নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করাই বেশি জরুরি।

অন্যদিকে আগে খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৩ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতপশিল করতে পারত। বর্তমানে সেটা ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পুনঃতপশিলের পাশাপাশি ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতার অজুহাতে ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব খেলাপি ঋণ হিসাব সহজ শর্তে পুনর্গঠন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই সুবিধা পেয়েছে মূলত শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি গোষ্ঠী। ওই সময় মোট ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছিল। এ ছাড়া অতি সম্প্রতি ১০টি দুর্বল ব্যাংককে অন্যান্য সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জ) করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘কোনো একটি ব্যাংক কী কারণে দুর্বল হলো, তার দায়-দেনার অবস্থা কী, তা নির্ধারণ না করেই অনেকটা জোর করে অন্য একটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা চলছে। এতে কোনো লাভ হবে না। আবার যেসব পরিচালকের কারণে ব্যাংকটি দুর্দশাগ্রস্ত, তাদের শাস্তির আওতায় না এনে ৫ বছর পর তাদের আবার পদে ফেরার সুযোগ রাখা হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধরনের পদক্ষেপ ঘটনা কোথাও দেখা যায়নি।’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণে ব্যাংক মালিকরা ভূমিকা রাখছেন। তাদের আবদারে ২০১৫ সালে ১১টি শিল্পগোষ্ঠীর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক পদে থাকার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন করা হয়েছিল। ওই বছরের ১ এপ্রিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বেসরকারি ব্যাংকের বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) কমিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। একই বছরের ২০ জুন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির কার্যালয়ে বসে আমানত ও ঋণের সুদ হার যথাক্রমে ছয় ও নয় শতাংশ করা হয়েছিল।

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহাল

news image

ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হল

news image

যার যার মত করে বৈশাখ উদযাপন করুন: প্রধান উপদেষ্টা

news image

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হলো ১৭ ঘণ্টা পর

news image

আদানির কেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধের কারণে লোডশেডিং বাড়তে পারে

news image

আমাদের হৃদয়ে বাস করে এক-একটা ফিলিস্তিন: মিজানুর রহমান আজহারী

news image

দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশ রয়েছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

news image

মার্চ ফর গাজা: লাখো মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হলো 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন'

news image

শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়েছে: ফারুকী

news image

অ্যামনেস্টি উদ্বেগ জানালো মেঘনা আলমকে নিয়ে

news image

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল

news image

সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুকে 'সর্বকালের সেরা বিদ্যুৎ চোর' বললেন সিদ্দিকী নাজমুল

news image

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

news image

এবার 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নয়, 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'

news image

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন লোগো প্রকাশ

news image

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল

news image

দেশে হুমকির মুখে নারীর অবস্থান ও নিরাপত্তা: মহিলা পরিষদ

news image

৬০ কি.মি. বেগে ঝোড়ো হাওয়া: চার অঞ্চলে সতর্কতা

news image

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে রপ্তানিতে কোন প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

news image

শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

news image

বিশ্বকে বদলে দেয়ার মতো দুর্দান্ত আইডিয়া আছে বাংলাদেশের কাছে: প্রধান উপদেষ্টা

news image

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ এপ্রিল বসছেন বিএনপি নেতারা

news image

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী শমী কায়সার

news image

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ আইনজীবীর ওপর ক্ষেপে গেলেন হাজী সেলিম

news image

‘এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনা, নিহত ৩২২ জন’

news image

কারামুক্ত হয়েই জনতার তোপের মুখে সাবেক এমপি আজিজ

news image

সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ

news image

সাবেক সাংসদ ও বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম গ্রেপ্তার

news image

বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে প্রস্তুত

news image

ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানাল বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন