সোমবার ১৪ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

৩০ হাজার যুবকের স্বপ্ন ভেঙে ২০ হাজার কোটি টাকা লুট

নিউজ ডেক্স ০২ জুন ২০২৪ ০৩:১৬ পি.এম

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

আদনান রহমান (২৮)। বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর। মায়ের গহনা আর মাঠের ২০ শতক জমি বিক্রি করে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন এজেন্সিকে। এর মধ্যে কিছু ধারও আছে। স্বপ্ন ছিল মালয়েশিয়ায় গিয়ে পরিবারের ভাগ্য ফেরাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এজেন্সির প্রতারণায় যাওয়া হয়নি তার। স্বপ্ন ভেঙেছে, পথে বসে গিয়েছেন। এখনো বিমানবন্দরে বসে আছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কোন মুখ নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন? সামনে শুধুই হতাশা। শুধু আদনান নয়, তার মতো ৩০ হাজারেরও বেশি যুবকের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তারা পথে বসেছেন আর এজেন্সির নামে হাতেগোনা কয়েক জন লুটে নিয়ে গেছে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা।

বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থাকা শাহরিয়ার মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন? কাদের মাধ্যমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে? তাদের নাম সবাই জানে। প্রভাবশালী এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নেবে? এরা সরকারে খুব প্রভাবশালী। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের আশপাশে থাকেন। আদেশ-উপদেশ দেন। তাহলে আমরা কীভাবে টাকা ফেরত পাব? পথে বসে যাওয়া এই লোকগুলোর কি হবে? সরকার কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে? তারাই তো সরকার চালাচ্ছে? আমাদের কথা কেউ ভাবে না।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘কাদের কারণে এই মানুষগুলো যেতে পারল না, সেটা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে যারা দোষী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমত ৩০ হাজার মানুষ যে যেতে পারেনি, এ কথা কে বলেছে? এই সংখ্যাটা অবশ্যই এত বেশি নয়। তবে কিছু মানুষ যেতে পারেনি, এটা সত্যি। এখন কেন যেতে পারেনি, সেটা আমাদের দেখতে হবে? আমরা বারবার চেয়েও বিমানের ফ্লাইট পাইনি। আবার মালয়েশিয়ার কিছু নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে ঐ দেশের সরকার এবং আমাদের দেশের সরকারও। কিন্তু তার আগেই তাদের কাছ থেকে কিছু চাহিদা এসেছিল, সে লোকগুলো যেতে পারেনি। আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা যেতে পারেনি, অবশ্যই তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কারো টাকা মার যাবে না।’

বিমান কর্তৃপক্ষ তো বলছে, তাদের আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। অথচ গত মার্চেই মালয়েশিয়া জানিয়ে দিয়েছিল ৩১ মের পর আর কোনো কর্মী তারা নেবে না? তাহলে তিন মাসেও কেন ব্যবস্থা করা 

যায়নি? জানতে চাইলে আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘এটা ঠিক না। আমরা যৌথভাবে অনেক বৈঠক করেছি। শেষ মুহূর্তে বিমান অনেক ফ্লাইটও বাড়িয়েছিল। তার পরও কিছু মানুষ যেতে পারেনি। আর কিছু মানুষের যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তারাও বিমানবন্দরে গিয়ে অপেক্ষা করেছে। ফলে দেখতে এত মানুষ মনে হয়েছে।’

কেন এত যুবকের স্বপ্ন ভঙ্গ হলো? এর দায় আসলে কার? জানতে চাইলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফরমের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘এর দায় সবার। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। মার্চেই তো তারা জানিয়ে দিয়েছিল, ৩১ মের পর কোনো শ্রমিক নেবে না। তাহলে এত দিনেও আমরা কেন ব্যবস্থা করতে পারিনি। অন্যদিকে বিমান মন্ত্রণালয় বলছে, তারা কিছুই জানে না। আবার মালয়েশিয়া সরকারেরও দায় আছে। তারা একেক সময় একেক নীতি নিচ্ছে। ফলে পুরো মার্কেটটা সিন্ডিকেটের হাতেই থাকছে। আগে যেখানে নিয়ন্ত্রণ করতেন ৮-১০ জন, এখন সেটা বেড়ে ২৫ জনের মতো হয়েছে। আর সারা বিশ্বেই ভিসার মেয়াদ থাকলে শ্রমিকরা যেতে পারেন, শুধু তারা দিনক্ষণ বেঁধে দেন, এটা ঠিক না।’    

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার শেষ দিনে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে মাত্র দেড় হাজার কর্মীর। এর বাইরে আরও ৩১ হাজার ৭০১ জন বাংলাদেশি কর্মী চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু টিকিট জটিলতায় তারা যেতে পারেনি। বিমানবন্দরে ব্যাগ-ট্রলি, লাগেজ নিয়ে বসে থাকা এমন কয়েক জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে এসেছেন, বলে এসেছেন, মালয়েশিয়া যাচ্ছেন।

বিমানবন্দরে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়া রুটে বিমান ভাড়া কয়েকগুণ বেশি নিয়েছে। ২৫ হাজার টাকার টিকিটের দাম ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তার পরও টিকিট মেলেনি। যারা গেছেন তাদের কেউই ৬ লাখ টাকার নিচে যেতে পারেনি। উপরে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে কাউকে কাউকে।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত ২১ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ২১ মের পর আর অনুমোদন দেওয়ার কথা না থাকলেও মন্ত্রণালয় আরও ১ হাজার ১১২ জনকে তা দিয়েছে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মালয়েশিয়া চলে গেছেন ৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ জন। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১ হাজার ৫০০ জন মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন। তাই যদি হয়, তাহলে অনুমোদন পেয়েও ৩১ হাজার ৭০১ জনের মালয়েশিয়া যাওয়া হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত।

গত বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে মালয়েশিয়ার টিকিট সংকট নিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। তিনি বলেন, বিমান ভাড়ার বিষয়টা সাপ্লায়ার এবং বিমানের ব্যাপার। যারা এটার সঙ্গে জড়িত, তারা ডেডলাইনের এক মাস আগে জানত। কিন্তু এটা নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি বা অন্য যারা সাপ্লায়ার আছেন, তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এখন বিমান প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় তিন থেকে চারটা করে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। বুধবারও ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় একটা এয়ার কম্বোডিয়ার, একটা এয়ারক্রাফট দিয়ে একটি চার্টাড ফ্লাইট পরিচালনার পারমিশন চেয়েছে, সেদিনই আমরা তাদের পারমিশন দিয়ে দিয়েছি। এটা এফিশিয়েন্ট আমরা মনে করি। বিমান যদি আরো আগে জানত, তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারত। বর্তমানে বিমানের হজ ফ্লাইট চলছে, তবুও আমরা চেষ্টা করেছি।

এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতারণামূলক নিয়োগের অভিযোগে চিঠি দিয়েছিল জাতিসংঘ। গত ২৮ মার্চ জাতিসংঘের দেওয়া সেই চিঠির জবাব দিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। এর মাধ্যমে বিদেশি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করল দেশটি। গত শুক্রবার ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘে মালয়েশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি নাদজিরা ওসমান মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন দপ্তরে (ওএইচসিএইচআর) চিঠিটি হস্তান্তর করেন। 

এ সময় তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘকে আশ্বস্ত করছি, মালয়েশিয়া অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, প্রতিশ্রুতির সঙ্গে কাগজপত্রও রয়েছে যেখানে শোষণ এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর রূপরেখাও রয়েছে।

সূত্র: ইত্তেফাক

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

কারাগার থেকে গণহারে মুক্তি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি: আবু হানিফ

news image

হানাহানি চাই না, শান্তির দেশ চাই: সেনাপ্রধান

news image

বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহাল

news image

ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হল

news image

যার যার মত করে বৈশাখ উদযাপন করুন: প্রধান উপদেষ্টা

news image

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হলো ১৭ ঘণ্টা পর

news image

আদানির কেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধের কারণে লোডশেডিং বাড়তে পারে

news image

আমাদের হৃদয়ে বাস করে এক-একটা ফিলিস্তিন: মিজানুর রহমান আজহারী

news image

দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশ রয়েছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

news image

মার্চ ফর গাজা: লাখো মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হলো 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন'

news image

শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়েছে: ফারুকী

news image

অ্যামনেস্টি উদ্বেগ জানালো মেঘনা আলমকে নিয়ে

news image

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল

news image

সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুকে 'সর্বকালের সেরা বিদ্যুৎ চোর' বললেন সিদ্দিকী নাজমুল

news image

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

news image

এবার 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নয়, 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'

news image

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন লোগো প্রকাশ

news image

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল

news image

দেশে হুমকির মুখে নারীর অবস্থান ও নিরাপত্তা: মহিলা পরিষদ

news image

৬০ কি.মি. বেগে ঝোড়ো হাওয়া: চার অঞ্চলে সতর্কতা

news image

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে রপ্তানিতে কোন প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

news image

শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

news image

বিশ্বকে বদলে দেয়ার মতো দুর্দান্ত আইডিয়া আছে বাংলাদেশের কাছে: প্রধান উপদেষ্টা

news image

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ এপ্রিল বসছেন বিএনপি নেতারা

news image

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী শমী কায়সার

news image

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ আইনজীবীর ওপর ক্ষেপে গেলেন হাজী সেলিম

news image

‘এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনা, নিহত ৩২২ জন’

news image

কারামুক্ত হয়েই জনতার তোপের মুখে সাবেক এমপি আজিজ

news image

সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ

news image

সাবেক সাংসদ ও বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম গ্রেপ্তার