বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

বাজেট ২০২৪-২০২৫ : মূল্যস্ফীতি কমবে তো?

নিউজ ডেক্স ২০ মে ২০২৪ ০১:০০ পি.এম

সংগৃহীত

বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও বাজার দর পরিস্থিতি যখন অসহনীয়ভাবে ভোক্তাদের প্রবল চাপের মুখে রেখেছে তখন সাধারণ মানুষের একটাই প্রত্যাশা, বাজেট হতে হবে মূল্যস্ফীতি কমানোর।
সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সমাজের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কাছে বাজেট মানেই দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি ও হ্রাসের হিসাব। তাই বাজেট এলেই প্রতি বছরেই সবার চোখ থাকে কোথায় খরচ বাড়ল বা কোথায় কমলো, তা জানতে। আসন্ন অর্থবছরের ২০২৪-২০২৫ বাজেটও এর ব্যতিক্রম নয়।

বাজেট হলো একটি অর্থবছরে সরকারের অনুমিত আয় এবং ব্যয়ের হিসাব। যার মূলত দুটি অংশ। রাজস্ব বাজেট ও উন্নয়ন বাজেট। সরকার রাজস্ব বাজেট তার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ব্যয় করে থাকে। আর উন্নয়ন বাজেটের কিছু অংশ সরকার নিজস্ব আয় থেকে সংগ্রহ করে আর বাকি অংশ সরকার ঋণ নিয়ে পূরণ করে থাকে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চাপ, স্বল্প বিনিয়োগ, বর্ধিত ঋণ সেবার দায়, ধীর প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, বেকারত্ব এবং বৈষম্যের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

 বাহ্যিক (বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক সংকট) এবং অভ্যন্তরীণ (সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামোগত সমস্যা) কারণগুলো একজোট হয়ে সৃষ্টি করছে এই চ্যালেঞ্জ সমূহের।

দেশের অর্থনৈতিক দলিল হিসেবে জাতীয় বাজেটকে মূল্যায়িত করা হয়। প্রতি বছর জুন মাসে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হয় এবং দেশের অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদের অর্থ বিল পেশ করেন। যা পরবর্তী অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকে।

ব্যক্তির বাজেটের সঙ্গে রাষ্ট্রের বাজেটের একটি মৌলিক পার্থক্য হলো, ব্যক্তি আগে আয় কত হবে ঠিক করে, ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করে। অন্যদিকে রাষ্ট্র আগে ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করে।

বাংলাদেশে বাজেটের অন্যতম সমস্যা হলো, দেশে জিডিপির তুলনায় কর আদায়ের হার অনেক কম। রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণে বাজেটে যেসব ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানো বিশেষ প্রয়োজন যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি সেইখানে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে না।

অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে ঘাটতি বাজেট করার পরামর্শ দেন। যেন অর্থনীতিতে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় ঘাটতি পূরণের চাপে। কিন্তু বর্তমান অর্থনীতিতে রাজস্ব আদায়ে স্থবিরতা; বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার সীমিত সক্ষমতা; স্থানীয় ঋণে সরকারের সুদ ব্যয় বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের সীমিত সুযোগ থাকার প্রতিক্রিয়ায় আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন সংকোচনমুখী হওয়া উচিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশকে কর ছাড় কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানো, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, ভর্তুকি যৌক্তিক করার কৌশল নির্ধারণ এবং খেলাপি ঋণ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। রাজস্ব বাড়াতে হলে কর বাড়াতে হবে। কিন্তু কর দেবে কে?

রাজস্ব আয় বাড়াতে যদি ভ্যাট বা পরোক্ষ কর বাড়ানো হয় তাহলে তার প্রভাব পরে সাধারণ মানুষের ওপর। তাই আসন্ন বাজেটে কর হার না বাড়িয়ে কর আদায়ের নতুন জায়গা খুঁজে বের করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি সমাজের ধনী শ্রেণির কাছ থেকে বেশি কর ও ভ্যাট আদায়, টাকা পাচার রোধ, পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার এবং ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ উদ্ধার করে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

জ্বালানি তেলের দামের সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সমন্বয় বলতে দাম কম-বেশি করাকে বোঝায়। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে সবসময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ইতিহাস থাকলে ও মূল্য হ্রাসের ঘটনা বিরল।

বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমছে ফলে মানুষের আয়ের সুযোগ ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। চাল, ডাল, ডিম, মুরগি, মাছ, মাংস, কাঁচাবাজার, ফলমূল, শিশুখাদ্য সব পণ্যের দামই সাধারণ মানুষের কেনার পক্ষে কষ্টসাধ্য।

জ্বালানি তেলের দামের সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সমন্বয় বলতে দাম কম-বেশি করাকে বোঝায়। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে সবসময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ইতিহাস থাকলে ও মূল্য হ্রাসের ঘটনা বিরল।

দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনা করে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি টেকসই করার বিষয়টিতে জোর দিয়ে সরকারের প্রতি আগামী বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্য ভর্তুকিতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করার কথা বলেছেন তারা।

খাদ্য মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে আমদানিতে, বাড়বে পণ্যের দাম। ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।

সাধারণ মানুষকে বাড়তি দামের চাপ থেকে মুক্ত রাখতে ওষুধ ও মেডিকেল সামগ্রীর মতো জরুরি নিত্যপণ্য, নবায়নযোগ্য শক্তি সংশ্লিষ্ট আমদানি, কৃষি উপকরণ এবং বিপুল কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সঙ্গে জড়িত প্রকল্পের জন্য আমদানির ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হওয়ার কথা বলেছেন কিছু অর্থনীতিবিদ।

যেহেতু সরকারের আর্থিক নীতি এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হয় বাজেটের মাধ্যমে। তাই নতুন বাজেটকে ঘিরে এবার ও মানুষের রয়েছে পুরানো প্রত্যাশা।

এটি দরিদ্র, নিম্ম এবং নিম্ম-মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর সুরক্ষা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং বৈষম্য হ্রাস করার মতো স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি সমস্যাগুলো মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যদিও প্রতিবারই এই সমস্যাগুলো সমাধানে বাজেটের সীমিত ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মতে, চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার মূল কারণ লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচার। পূর্ববর্তী বাজেট সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাজেটের বড় অংশ অর্থ বরাদ্দ করা হলেও অর্থের অপচয়, অনিয়ম ও বিভিন্ন স্তরে নানামুখী দুর্নীতির কারণে সঠিকভাবে উপকারভোগীদের কাছে ভাতা পৌঁছোয় না।

সরকার কর্তৃক দেওয়া ভর্তুকির বেশিরভাগ রাঘববোয়াল ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা চেটেপুটে খান বলে অভিযোগ আছে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে বাজেটের সুফল পাবে না সাধারণ মানুষ। তাই, দেশের প্রতিটি মানুষ প্রত্যাশা করে দুর্নীতি দূরীকরণ ও অর্থপাচারের বিশাল দুষ্টচক্রকে নিয়ন্ত্রণের সঠিক দিক নির্দেশনা থাকবে আসন্ন বাজেটে।

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

নিজেদের সম্পদ পাকিস্তানের কাছে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ

news image

ঢাকাসহ ৭ জেলায় রাতের মধ্যে ধেয়ে আসছে ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়!

news image

ফের চালু আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিট, বাড়লো সরবরাহ

news image

দেশব্যাপী আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সবুজায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

news image

মায়ানমার থেকে দেশে ফিরেছে ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’

news image

উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পেলেন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব

news image

৫ বছর সরকারকে ক্ষমতায় রাখার বিষয় আমি কিছু বলিনি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ টিউলিপের

news image

ড্রোন শো জানিয়ে দিল ইতিহাসের নানা পর্ব

news image

বাংলাদেশে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

news image

কারাগার থেকে গণহারে মুক্তি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি: আবু হানিফ

news image

হানাহানি চাই না, শান্তির দেশ চাই: সেনাপ্রধান

news image

বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহাল

news image

ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হল

news image

যার যার মত করে বৈশাখ উদযাপন করুন: প্রধান উপদেষ্টা

news image

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হলো ১৭ ঘণ্টা পর

news image

আদানির কেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধের কারণে লোডশেডিং বাড়তে পারে

news image

আমাদের হৃদয়ে বাস করে এক-একটা ফিলিস্তিন: মিজানুর রহমান আজহারী

news image

দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশ রয়েছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

news image

মার্চ ফর গাজা: লাখো মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হলো 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন'

news image

শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়েছে: ফারুকী

news image

অ্যামনেস্টি উদ্বেগ জানালো মেঘনা আলমকে নিয়ে

news image

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল

news image

সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুকে 'সর্বকালের সেরা বিদ্যুৎ চোর' বললেন সিদ্দিকী নাজমুল

news image

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

news image

এবার 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নয়, 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'

news image

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন লোগো প্রকাশ

news image

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল

news image

দেশে হুমকির মুখে নারীর অবস্থান ও নিরাপত্তা: মহিলা পরিষদ

news image

৬০ কি.মি. বেগে ঝোড়ো হাওয়া: চার অঞ্চলে সতর্কতা