সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

সিন্ডিকেট করে কম দামে ধান ক্রয়: কৃষকের লাভ খাচ্ছে দালালরা

নিউজ ডেক্স ১৯ মে ২০২৪ ০১:২১ পি.এম

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

সিন্ডিকেট করে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করে মুনাফা লুটছে দালাল প্রভাবশালীরা। আর এতে সহায়তা করছে এক শ্রেণির খাদ্য কর্মকর্তা। তবে খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকরা সঠিক মানের ধান নিয়ে আসলে তাদের ধান কেনা হয়। কৃষক বাদে অন্য কারো কাছ থেকে ধান কেনার কোনো আইন বা সুযোগ নেই।

এবার সরকারিভাবে প্রতি মণ বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২৮০ টাকা (প্রতি কেজি ৩২ টাকা)। গত ৮ মে খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার সরকারিভাবে ধান-চাল কেনার কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এবার সরকার ১৭ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে। এরমধ্যে ধান কেনা হবে পাঁচ লাখ টন। সেদ্ধ চাল ১১ লাখ টন এবং আতপ চাল এক লাখ টন। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কেনা হবে।

প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান ৩২ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা এবং আতপ চাল ৪৪ টাকা। একইঙ্গে ৩৪ টাকা দরে ৫০ হাজার টন গম কেনারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কৃষদের জন্য বোরো ধানই মুখ্য। কারণ চাল বিক্রি করেন মালিকরা। এবার গত বছরের চেয়ে ধানের দাম প্রতি কেজিতে দুই টাকা বেশি ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কৃষক রিপন মিয়া বলেন, সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারলে লাভ থাকত। কিন্তু আমরা তো সেখানে যেতেই পারি না। দালালরা ওই কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের যেতেই দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে ৮৫০-৯০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। কিন্তু এই দামে ধান কিনে তারা সরকারের কাছে বেচে এক হাজার ২৮০ টাকায়।

তিনি অভিযোগ করেন, নানা অজুহাতে আমাদের আটকে দেওয়া হয়। এরমধ্যে আছে কৃষক কার্ড, ময়েশ্চার (আর্দ্রতা), ধানে চিটা। কেউ কেউ কেন্দ্রে নিতে পারলেও এইসব অজুহাতে ধান ফেরত দেয়া হয়। আমাদের পরিবহন খরচ গচ্চা যায়।

এবার দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন কুঁড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কৃষক নাসির উদ্দিন। ফলনও ভালো পেয়েছেন। তিনি জানান, প্রথমে কৃষককে কৃষি কার্ড পেতে হয়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। এরপর ধান নিয়ে গেলে লটারি করা হয়। লটারিতে যাদের নাম আসে তাদের ধানের আর্দ্রতা পরীক্ষা করা হয়। যদি আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হয় তাহলে ধান নেয় না।

অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর আমার যে ধান সঠিক আর্দ্রতা নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই ধান দালালের কাছে বিক্রি করার পর তাদের কাছ থেকে একই ধান কিন্তু ক্রয় কেন্দ্র নিয়েছে। দালাল ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের একটা অবৈধ যোগাযোগ আছে। তারা মিলে একটা সিন্ডিকেট। এর সঙ্গে গুদামের শ্রমিকরাও জড়িত। 

প্রতি মণে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে ৩৫০ টাকা
সরকারি পর্যায়ে ধান কেনার যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়েই কৃষকদের বঞ্চিত করছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে বেশি দামে বিক্রি করে। এবার প্রতি মণে এ তারা কমপক্ষে ৩০০-৩৫০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এই লাভের ভাগ প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরাও পান।

নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে হলে কৃষকের কৃষি কার্ড থাকতে হবে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে ও ধানের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।

কিন্তু কৃষকের কাছে তো আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র নেই, ফলে ধান কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। কারণ তাকে বাড়ি গিয়ে ধান আরো শুকিয়ে আনতে হলে পরিবহন খরচ লাগে। আর কৃষি কার্ড পেতেও আছে জটিলতা। কারণ জমির মালিকানা না থাকলে পাওয়া যায় না। বর্গা চাষিরা তাই কৃষি কার্ড পান না। আর ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই অনেকের। যদিও ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ আছে।

হাওর এলাকায় আমনের ফলন
এবার হাওর এলাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠাইমন উপজেলার কৃষক আরমান হোসেন এবার পাঁচ একর জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তার ভাই করেছেন ৩৫ একর জমিতে।

তিনি বলেন, ভালো ফলন হলেও আমরা সরকারি কেন্দ্রে বিক্রি করতে পারছি না। বাইরে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে দালাল আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাপট। তাদের কাছেই আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা ৯০০-৯৫০ টাকা মণ তাদের কাছে বিক্রি করছি।

মিঠাইমন উপজলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহা. এনামুল হক বলেন, কৃষক ছাড়া অন্য কারো এখানে ধান বিক্রির সুযোগ নেই। আমরা কৃষক কার্ড দিয়েছি। সেই কার্ড দেখে ধান কিনি। আর ধানের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। আমরা সর্বোচ্চ একজনের কাছ থেকে তিন টন ধান কিনি। আমরা গত বছর সাত হাজার কৃষক কার্ড দিয়েছি। এবার আবার আপডেট করছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা ধানের দাম কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেই। ফলে কোনো দালাল বা ফড়িয়ার এখানো কিছু করার সুযোগ নেই।

খাদ্য অধিদফতর যা বলছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, আসলে দালাল এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সিন্ডিকেট করেন। ফলে অনেক প্রকৃত কৃষক কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে পারেন না। কিন্তু এটা তো আমরা দেখতে পারি না। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। যারা দালাল তাদেরও কৃষি কার্ড আছে। আর দালালরা তো সংঘবদ্ধ।

খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, এবার আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র নিয়ে কৃষকের বাড়ি বাড়ি যাওয়া হবে। যদি দেখা যায় তা ১৪ ভাগের বেশি হয় তাহলে তাদের ধান শুকিয়ে সঠিক পর্যায়ে এনে তারপর কেনা হবে। যাতে তারা আর্দ্রতার ফাঁদে না পড়েন। 

তবে খাদ্য অধিদফতরের ধান-চাল সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, এটা আমাদের কাজ নয়। আমাদের এত জনবল নেই। এটা কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারদের করার কথা। তারা করছে কিনা আমার জানা নেই।

কৃষকরা দালালেদের দাপটে সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারছে না এই অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রগুলো কৃষকদের ধান কেনার জন্যই। তাদের কাছ থেকেই আমরা ধান কিনছি। তাদের কাছ থেকে ধান কেনায় কোনো বাধা নেই। তারা কোথাও বাধা পেয়ে বা চাপের কারণে কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করতে পারেননি এরকম কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই।

তিনি আরো জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে অল্প কিছু ক্রয় কেন্দ্র আছে। মূলত উপজেলা পর্যায়েই ধান কেনা হয়। 
সূত্র : ডয়চে ভেলে

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

৩ ঘণ্টা পর আরিচায় ফেরি চলাচল শুরু

news image

পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি, বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ 

news image

ঝিনাইদহে মেছো বিড়াল হত্যার অপরাধে আসামি গ্রেপ্তার

news image

বিজেসির ৫ম সম্প্রচার সম্মেলন শুরু

news image

আজ বৃষ্টি হবে, বাড়বে শীতের তীব্রতা

news image

গৌরীপুর প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠিত 

news image

একই লেক থেকে সুজানার বন্ধু কাব্যের মরদেহ উদ্ধার

news image

লক্ষ্মীপুরে সমাজ সেবার সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণের চেক বিতরণ অনুষ্ঠিত

news image

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ

news image

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি

news image

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তাবলিগের দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ৩

news image

ঢাকার সঙ্গে রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক

news image

কুমিল্লায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গাছের ঢেঁকি এখন অস্তিত্ববিহীন

news image

অস্থায়ী শ্রমিকদের এফডিসি রেলক্রসিংয়ে অবরোধ

news image

৪ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস

news image

সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় সরকার এক ইঞ্চিও আটকাবে না : শফিকুল আলম

news image

জানুয়ারিতে তাপমাত্রা নামতে পারে ৩ ডিগ্রিতে 

news image

পঞ্চগড়ে মৃদু শৈতপ্রবাহ ও তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রিতে 

news image

ভালুকায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৩ জনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

news image

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

news image

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

news image

তিন নৌ-রুটে ৮ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক

news image

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকা

news image

বঞ্চিত ৭৫৪ জন কর্মকর্তাকে পদায়নের সুপারিশ

news image

গৌরীপুরে ভিক্ষার হাতকে কর্মের হাতে রূপান্তরের উদ্যোগ ইউএনও

news image

কুমিল্লায় অস্তিত্ব সংকটে খেজুর গাছ রস সংগ্রহ যেন সোনার হরিণ 

news image

ঘন কুয়াশায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামতে পারেনি উড়োজাহাজ

news image

কুমিল্লায় ডাকাতিয়া নদীর পানি দূষনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের

news image

তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড ১২ ডিগ্রি

news image

আন্দোলনের মুখে ভিসির পদ ছাড়লেন অনুপম সেন