ভারতীয় করোনা টিকায় মরণব্যাধি, ঝুঁকিতে টিকা গ্রহণকারীরা

ভারতে জীবন বাঁচানো করোনা টিকা কোভিশিল্ড বহু মানুষকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। সেই টিকা নিয়ে এবার ভয়ানক তথ্য ফাঁস। জানা গেছে ভারতে তৈরি করোনা ভ্যাকসিনে রয়েছে মরণঘাতি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কোভিশিল্ড  নামক এ টিকার যথেষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা এবার স্বীকার করে নিল টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

করোনা মহামারি পর্বে মৃত্যুমিছিল দেখেছিল বিশ্ব। কোভিডে স্বজন হারানোর দুঃখ এখনও অনেকে ভুলতে পারেননি। ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড নেওয়া মানুষের শরীরে অত্যন্ত বিরল টিটিএসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, এই টিকার একটি বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মানুষের শরীরের রক্ত জমাট বাধার ব্যাধি থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোমে (টিটিএস) আক্রান্ত হওয়া। এই রোগে আক্রান্ত হলে রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় মস্তিষ্কসহ শরীরের জটিল কিছু জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতের কাছে জমা দেওয়া নথিতে স্বীকারও করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে আদালতে জমা দেওয়া একটি নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থা জানায়, তাদের তৈরি করা প্রতিষেধকের কারণে এই বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সহযোগিতায় এই প্রতিষেধক তৈরি করেছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থাটি। অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এই করোনা টিকা উৎপাদন করেছে ভারতীয় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। করোনা পর্বের ভারতে কোভিশিল্ড সর্বাধিক জনপ্রিয় হয়েছিল। ঘরে ঘরে মানুষ এই টিকার দু’টি এবং অনেকেই তিনটি অর্থাৎ বুস্টার ডোজও গ্রহণ করেছেন। সে ক্ষেত্রে এতদিন পর টিকা সম্পর্কিত এই ভয়ংকর তথ্য প্রকাশ্যে আসতে আতঙ্কিত ভারতীয়রা ।

২০২১ সালে জেমি স্কট নামে এক ব্যক্তি অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যায় । জেমি স্কটের মতো আরও অনেক টিকাগ্রহীতাই এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থদের পরিবারের তরফে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও দায়ের হয়। সেই থেকে এই মামলাটি বিচারাধীন। বিভিন্ন নথি এবং তথ্যপ্রমাণ দেখিয়ে নিজেদের নির্দোষের প্রমাণ করার চেষ্টা করে চলেছে সংস্থা। তবে মামলা চলাকালীন, আদালত জানিয়ে দেয়, সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণিত হয় তা হলে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে।

ভারতে কোভিশিল্ড নামে পরিচিত এ টিকা সাধারণ সর্দিজ্বরের ভাইরাসের একটি দুর্বল সংস্করণ থেকে তৈরি। এটি শিম্পাঞ্জির দেহে হয় এবং এর নাম অ্যাডেনোভাইরাস। এতে সরাসরি ভাইরাসের প্রোটিন যাতে শরীরে ঢুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে না পারে, সে কারণেই অন্য একটি ভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশকে করোনার এই টিকা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতি ৫০ হাজার জনের মধ্যে একজনেরও (০.০০২ শতাংশ) কম মানুষের শরীরে দেখা দেয়। তবে বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা বড় আকার ধারণ করে।

নবীন নিউজ/জেড