নিউজ ডেক্স ০৬ মে ২০২৪ ০৫:৪৭ পি.এম
চা! চা একটি মারাত্মক নেশা। চা খায় না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। দিন দিন বাড়ছে চায়ের উৎপাদন। কিন্তু দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও শ্রমিকদের দারিদ্রতা ছেড়ে যায়নি।
প্রকৃতির সবুজ চাদরে মোড়ানো চা বাগান শুধু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী নয়। প্রায় ২০০ বছর ধরে সেখানে বসবাসরত চা শ্রমিকদের ঘামে ও শ্রমে প্রতি বছর চা উৎপাদন হচ্ছে তবুও এখনও অর্থের অভাবে মানবেতর দিন পার করছে মৌলভীবাজারে ৯৭টি চা বাগানে কাজ করা ৯০ হাজার শ্রমিক।
প্রতি বছর ১ মে দিবস পালিত হয়ে আসছে, প্রতি বছর মে দিবস আসে আবার চলে যায়। কিন্তু তাদের অধিকার, নিজস্ব ভূমি থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার মান আজও বদলায়নি। চা শ্রমিকরা আজও তাদের ন্যায্য দাবি দাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চা শিল্প ও বস্তি এলাকার বেকার নারী শ্রমিকরা বৈষম্যমূলক মজুরিতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। মে দিবসকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিনোদন আর ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের অধিকার থাকলেও জীবন আর জীবিকার তাগিদে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নারী-পুরুষ ও বেকার শ্রমিকরা মে দিবসে অর্জিত অধিকার থেকে বঞ্চিত।
যাদের শ্রমে অর্জিত হচ্ছে হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা, তাদের অবহেলিত না রেখে অধিকার বাস্তবায়ন করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা চা শ্রমিক নেতাদের। চা শ্রমিকদের প্রতি সদয় আচরণ ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের দায়িত্ব।
মৌলভীবাজার শ্রম অধিদপ্তর শ্রম অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, চা দেশের অন্যতম রপ্তানীমুখী একটি শিল্প। সেই শিল্পে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন দেশের মোট ১৬৩টি চা বাগানের লক্ষাধিক চা শ্রমিক। আর সেই চা বাগানের মধ্যে ৯২টি বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়।
এদিকে বছরের পর বছর ধরে এসব চা বাগানে কর্মরত লক্ষাধিক চা শ্রমিক দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলেও এখনো তাদের বেতন বৈষম্যসহ নানা বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। সারা দেশে কর্মরত চা শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৯২টি চা বাগান মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার নিয়মিত চা শ্রমিক কাজ করেন এই জেলায়। তাদের সিংহ ভাগই নারী।
জানা যায়, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাগানে যারা কাজ করেন তাদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক। প্রতিবছর মে দিবস আসে আবার চলে যায়। কিন্তু তাদের নিজস্ব ভূমি থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার কোনো বদল আজও হয়নি। এখনো অনেক শ্রমিককে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে চা পাতা তুলে, সেই খরচ দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর পুরুষ শ্রমিকদের অধিকাংশই বেকার। আর যারা নিয়মিত কাজ করছেন তারা কোম্পানি থেকে যা পান সেটা দিয়ে সংসার চলে না। এ নিয়ে তাদের অভিযোগের শেষ নেই। মৌলিক চাহিদা পূরণে দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধি, ভূমি অধিকার, বাসস্থান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবি তাদের।
কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন চা শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের শ্রম দিয়ে চা বাগান আগলে রাখলেও তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা এখনো অবহেলিত। সরকার তাদের আবাসস্থল নিজ নিজ মালিকানায় করে দিবে বললেও এখনো সে উদ্যোগের কোনো অগ্রগতি নেই।
নারী শ্রমিক পারভীন বেগম ও শেফালি কর বলেন, পেটের দায়ে যখন যে কাজ পাই সেটা করতে আমরা বাধ্য হই। তারপরও দেড়শ কিংবা দুইশ টাকা রোজ দেওয়া হয়। এটি দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। আর পুরুষরা কাজ করলেই তিন থেকে চারশ টাকা পান। আমরাও পুরুষদের চেয়ে কাজ কম করি না। তবে পারিশ্রমিক কম পাই।
তারা জানান, প্রতি বছর চা বাগানের অনেক মানুষ নিয়ে আমরা মে দিবস পালন করি। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা সবার কাছে তুলে ধরি। কিন্তু আমাদের এই আন্দোলন কে শুনবে, কী হবে আর মে দিবস পালন করে।
শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের মনি গোয়ালা, লছমী রাজভর, আলীনগর চা বাগানের রেবতি রিকিয়াশনসহ নারী শ্রমিকরাও জানান, তারা ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা সেরে কাজে বের হন আর সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে রান্নাবান্না করেন। এটি চা বাগানের বেকার নারীদের প্রতিদিনের চিত্র। এভাবেই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম। বস্তির অতি দরিদ্র ও চা শিল্পে শ্রমজীবীদের একটি বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে বেকার। চা বাগানের নারীদের কাছ থেকে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়।
তারা বলেন, বর্তমান শ্রমিকবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি, এই অবহেলিত চা শ্রমিকদের বাসস্থানের জায়গাটুকু যাতে তাদের নিজের নামে করে দেওয়া হয়। যাতে বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের যখন তখন ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে না পারে।
শ্রীমঙ্গলে বালিশিরা ভ্যারি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি হলো চাকরির কোটা, শিক্ষা কৌটা, বাসস্থান, ভূমি এই মৌলিক অধিকার যেগুলো রয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে যাতে এগুলো পূরণ করা হয়। এই দেশে আমরা মানুষ হিসেবে আছি চা বাগানের চা শ্রমিকরা পিছিয়ে পড়া জাতি। এবং অনেক পিছনে রয়েছি এই দেশের সঙ্গে তাল মিলাতে হলে আমাদের কাছে সরকারকে আসতে হবে, চা শ্রমিকদের কথা বলতে হবে চা বাগানের মানিকদের।
তিনি বলেন, চুক্তিতে বলা আছে মিতিংকা টাইপের ঘর দেওয়ার কথা, আসলে সেই টাইপের ঘর দেওয়া হয়নি। সেই পাকিস্তান আমলের ঘরগুলো আছে, ঘরগুলো দেখবেন কাগজ দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে যাওয়ার অবস্থা।
শ্রীমঙ্গলে ফিনলে টি ভাড়াউড়া ডিভিশন জেনারেল ম্যানাজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, অকশনে চায়ের দাম বৃদ্ধি না পাওয়াতে ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিকরা। অনেক মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমনটা বজায় থাকলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে চা বাগান।
মৌলভীবাজার শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, তবুও তাদের দাবি-দাওয়াসহ নানা বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। চা শ্রমিকদের আবাসনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় বিবেচনায় আছে। তা ছাড়া ইতোমধ্যে ২৬৫ জন চা শ্রমিকের প্রত্যেককে সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর দেওয়া হয়েছে। ৩৫ হাজার শ্রমিককে প্রতি বছর ৫ হাজার টাকা করে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি তারা গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।
২০২৩ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়। গত বছর দেশের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা–চাষিদের হাত ধরে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরুর পর ১৮৪ বছরের ইতিহাসে গত বছর প্রথমবারের মতো চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়ায়। এর আগে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল ২০২১ সালে।
সে বছর দেশের সব বাগান মিলিয়ে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চায়ের উৎপাদন হল, এখন সেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডে দাঁড়ায়। তৃতীয় সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর চা উৎপাদিত হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি।
নবীন নিউজ/জেড
ঝিনাইগাতীতে কূপ সংস্কার করতে গিয়ে নিহত দুইজনের পরিবারের পাশে ইউএনও
চার জেলায় দুপুরের মধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস
খুলনায় আটক হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
দিনাজপুরে গ্রেপ্তার হলেন গাইবান্ধার সাবেক এমপি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবের উদ্বোধন
গৃহবধূর লাশ হাসপাতালে রেখে পালালেন শশুর বাড়ির লোকজন
থাইল্যান্ডের নারী এলেন বিয়ে করতে, হলেন ধর্ষণের শিকার!
শরীয়তপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জরিমানার টাকা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০
বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রায়পুরায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন
সালথায় বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০
চট্টগ্রামে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর
বাঞ্ছারামপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন
পাঁচবিবিতে প্রকল্পের নামে জমি দখলের পায়তারা: দুদকে অভিযোগ
চট্টগ্রামে এখন রাশিয়ার ৩ যুদ্ধজাহাজ
'পাগলা চাচা শেখ হাসিনা কোথায়'
রায়পুরায় ইউপি সদস্যকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
গাজীপুরে কৃষক দল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে অভিযান, ১৭ বন্যপ্রাণী জব্দ
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি: হচ্ছে না ভোট, বিএনপি-জামায়াতের পদ ‘ভাগাভাগি’
ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে নোয়াখালী শহরে বিক্ষোভ
পুকুর পাড়ে পড়েছিল বস্তাবন্দী খণ্ড-বিখণ্ড ৩ মরদেহ
আখাউড়ায় ট্রেনে তেলচুরি: চালক ও পরিচালকসহ ৮ জনের নামে মামলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আড়াই হাজার কৃষক পেলেন বিনামুল্যের সার-বীজ
সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে বাংলাদেশির মৃত্যুর অভিযোগ
বান্দরবানের পাহাড় থেকে ৯ জনকে অপহরণ
সরাইলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ আহত অর্থ শতাধিক
নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার
গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল পঞ্চগড়
ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিনভর বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ