বুধবার ১৫ জানু ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
আন্তর্জাতিক

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরিণতি কোন পথে?

নিউজ ডেক্স ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২০ এ.এম

সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা ও সংযমের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইরানের হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

শনিবার (১৩ এপ্রিল) ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বৈঠক করেন নেতানিয়াহু। ওই সভাতেই সিদ্ধান্ত হয় যে, ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাব দেওয়া হবে। কিন্তু এখন সবারই প্রশ্ন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরিণতি কোন পথে?

ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারের মতে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের পরিণতি কী হতে পারে তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে ইসরায়েল ঠিক কীভাবে শনিবার রাতে চালানো হামলার জবাব দেয়, তার ওপর।

তিনি আরও জানাচ্ছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ও বিশ্বের অন্যত্রও বহু দেশই কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছে। এর মধ্যে এমন অনেক দেশও আছে, যারা ইরানের সরকারকে ঘোরতর অপছন্দ করে।

কিন্তু এখন তারাও চাইছে ইসরায়েল যেন নতুন করে এই হামলার জবাব দিতে না যায়।

অন্য দিকে ইরানের মনোভাবটা অনেকটা এই ধরনের : ‘অ্যাকাউন্ট সেটলড – মানে শোধবোধ হয়ে গেছে। ব্যাস, বিষয়টার এখানেই ইতি টানলেই ভাল।’

‘তবে হ্যাঁ, যদি আবার আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হানতে যাও সে ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অনেক বেশি শক্তিশালী হামলা চালাব – যেটা প্রতিহত করা তোমাদের সাধ্যে কুলোবে না’, ইরানের মানসিকতা ব্যাখ্যা করে জানাচ্ছেন ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার।

পার্সিয়ান বিভাগও বলছে, গত রাতের হামলার পরিণতিতে ইরানের কর্তৃপক্ষ তো বটেই, দেশের সাধারণ মানুষও বেশ খুশি। তেহরানের রাস্তায় নেমে তারা উল্লাসও করেছেন।

ইসরায়েল যদি নতুন করে আর হামলা না-চালায়, তাহলে ব্যাপারটা এখানেই মিটে যাওয়া ভাল – এমন একটা মানসিকতাও তেহরানে কাজ করছে।

কিন্তু ইসরায়েল ইতোমধ্যেই ‘রীতিমতো কড়া জবাব’ দেওয়ার অঙ্গীকার করে বসে আছে।

ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-র নেতৃত্বে এই মুহুর্তে যে সরকার ক্ষমতায় আছে, তাকে অনেকেই সে দেশের ইতিহাসে সব চেয়ে ‘কট্টরপন্থী’ বা হার্ডলাইন সরকার বলে বর্ণনা করে থাকেন।

গত ৭ই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের চালানো অতর্কিত হামলার জবাব দিতে ইসরায়েল সময় নিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘন্টা।

তারপর ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা একটানা গাজা ভূখণ্ডে তীব্র অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে গাজাকে যেন তারা প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাইছে।

এখন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন, ইসরায়েলের ‘ওয়ার ক্যাবিনেট’ বা যুদ্ধ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ইরানের এই প্রত্যক্ষ হামলার কোনও জবাব না-দিয়ে হাত গুটিয়ে থাকবে, এই সম্ভাবনা আসলে খুব ক্ষীণ।

তাহলে ইসরায়েলের সামনে এখন কী কী অপশন খোলা আছে?

প্রথমত, হতে পারে তারা ওই অঞ্চলে তাদের প্রতিবেশীদের কথায় আমল দেবে এবং একটা ‘স্ট্র্যাটেজিক পেশেন্স’ বা ‘কৌশলগত ধৈর্য প্রদর্শনে’র রাস্তায় হাঁটবে।

এর অর্থ হল, সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে কোনও পাল্টা হামলা না-চালিয়ে তারা ওই অঞ্চলে ইরানের যে সব ‘প্রক্সি অ্যালাইজ’ বা শরিকরা আছে তাদের ওপর অভিযান চালিয়ে যাবে।

এর মধ্যে আছে লেবাননের হেজবোল্লাহ্-র মতো গোষ্ঠী কিংবা সিরিয়াতে ইরানের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ কেন্দ্রগুলো – যার বিরুদ্ধে ইসরায়েল বিগত বহু বছর ধরেই হামলা চালিয়ে আসছে।

দ্বিতীয়ত, ইরান যে ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা ঠিক সেই ধরনের ‘সাবধানে ও মেপে মেপে’ (‘কেয়ারফুলি ক্যালিব্রেটেড’) হামলা চালাতে পারে – যার নির্দিষ্ট লক্ষ্য হবে ইরানের সেই মিসাইল বেস-গুলো, যেখানে থেকে গত রাতের হামলা চালানো হয়েছিল।

তবে ইসরায়েল যদি এই অপশনটা বেছে নেয়, তাহলে ইরান সেটাকেও ‘এসক্যালেশন’ বা যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবেই দেখবে।

কারণ বহু বছরের বৈরিতা সত্ত্বেও ইসরায়েল ইতিপূর্বে কখনওই সরাসরি ইরানের ভূখণ্ডে কোনও হামলা চালায়নি। বরং তারা ওই অঞ্চলে ইরানের সঙ্গী বা প্রক্সি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে আক্রমণেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে।

তৃতীয় পথ হতে পারে, ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল – এবং ইরান যেভাবে হামলা চালিয়েছে তার চেয়ে অনেক শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালাল।

সে ক্ষেত্রে তারা শুধু নির্দিষ্ট মিসাইল বেস-গুলোই নয়, ইরানের অত্যন্ত শক্তিশালী রিভোলিউশনারি গার্ডসের ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ শিবির ও কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারগুলোকেও আক্রমণের নিশানা করবে।

ইসরায়েল যদি এই শেষ দুটো অপশনের কোনওটা বেছে নেয়, তাহলে ইরানকেও অবশ্যই আবারও পাল্টা আঘাত হানার পথে যেতে হবে।

আর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, এই সংঘাতে কি আমেরিকাও জড়িয়ে পড়তে পারে?

পরিস্থিতি কি এমন দাঁড়াতে পারে, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী আর ইরানের মধ্যেও পুরোদস্তুর গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়?

মনে রাখতে হবে, উপসাগরীয় (গালফ) আরব অঞ্চলের ছ’টি দেশেই কিন্তু মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে। এছাড়াও তাদের সামরিক ঘাঁটি আছে সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডানেও।

বহু বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান যে ব্যালিস্টিক ও অন্য নানা ধরনের মিসাইলের বিপুল ভাণ্ডার তৈরি করেছে, মার্কিন এই সামরিক ঘাঁটিগুলো সেই সব ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানায় পরিণত হতে পারে।

ইরান দীর্ঘদিন ধরেই আর একটা হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে – তারা যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তারা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে।

কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথটি যদি ইরান মাইন, ড্রোন ও ফাস্ট অ্যাটাক ক্র্যাফট দিয়ে বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম ব্যস্ত রুটটি অচল হয়ে পড়বে এবং বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের এক-চতুর্থাংশ স্তব্ধ হয়ে যাবে।

অবধারিতভাবে সেটা হবে একটা দু:স্বপ্নের মতো পরিস্থিতি – এবং সে কারণেই বিশ্বের প্রায় সব শক্তিধর দেশ সেই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইরানের মানুষজন কী ভাবছেন?

ইরানের রিভোলিউশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালানোর পর ইরানে সরকারের সমর্থক বহু মানুষ তেহরানের রাজপথে নেমে এসে আনন্দোল্লাস করতে থাকেন, জানাচ্ছেন বিবিসির পার্সিয়ান বিভাগের সাংবাদিক জিয়ার গোল।

মধ্যপ্রাচ্যে যে সব দেশ ইরানের মিত্র বা শরিক হিসেবে পরিচিত, তাদের মধ্যে এবং ইরানের ভেতরেও সমর্থকদের মধ্যে আইআরজিসি-র গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য এই হামলা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইরানের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি জানান, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যে সব নিশানাকে লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছেন তার মধ্যে সে দেশের নোটাম বিমানবাহিনী ঘাঁটিও (এয়ারফোর্স বেস) ছিল।

দু’সপ্তাহ আগে যে ইসরায়েলি এফ-৩৫ বিমানগুলোর চালানো হামলায় দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে সাতজন আইআরজিসি কমান্ডার নিহত হয়েছিলেন, সেই যুদ্ধবিমানগুলো এই ঘাঁটি থেকেই উড়ে গিয়েছিল।

মেজর জেনারেল বাঘেরি এটাও জানিয়েছেন, ইরান তাদের ‘লক্ষ্য অর্জন করেছে’ এবং অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কোনও অভিপ্রায় তাদের নেই।

তবে ইরানিয়ান প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নতুন করে (ইরানের বিরুদ্ধে) কোনও হামলা চালানো হলে ইরান তার অনেক কঠোর প্রত্যুত্তর দেবে।

জিয়ার গোল জানাচ্ছেন, সার্বিকভাবে মনে হচ্ছে ইরানের ‘মুড’ এখন ডি-এসক্যালেশন বা উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষেই।

সে দেশের শীর্ষ সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের কথাবার্তা থেকে মনে হচ্ছে তারা গত রাতের হামলার পরিণামে ‘সন্তুষ্ট’।

তা ছাড়া ইরান যেভাবে ইসরায়েলকে তাদের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সংহত করার জন্য প্রচুর সময় দিয়েছে তাতেও মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে যে তারা নতুন করে আর কোনও হামলা চালাতে ইচ্ছুক নয়, যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানি হতে পারে।

কিন্তু ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, তা যেহেতু কোনও একটি পক্ষের ওপর নির্ভর করছে না – তাই আপাতত সারা দুনিয়াকেই পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখতে হবে।

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কানাডা

news image

নাইজেরিয়ার বোর্নো প্রদেশে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ৪০ কৃষক নিহত

news image

ট্রাম্পের শপথের আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রমুখী অভিবাসী ঢল

news image

শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু ভারতে থাকতে দেওয়া উচিত : কংগ্রেস নেতা শংকর

news image

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত

news image

১৯ সন্তানের মা হয়েও সৌদি নারীর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন 

news image

ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত, মিরাটে একই পরিবারের ৫ জন খুন

news image

টিউলিপ সিদ্দিক হারাতে পারেন মন্ত্রিত্ব

news image

দাবানলের তাণ্ডবে পুড়ছে ক্যালিফোর্নিয়া, সরানো হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ

news image

লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানল: পুড়েছে ঘরবাড়ি, নিহত ৫

news image

কানাডাকে যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন মানচিত্র প্রকাশ ট্রাম্পের

news image

যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই কানাডার : জাস্টিন ট্রুডো

news image

লস অ্যাঞ্জেলেসে বিধ্বংসী দাবানল, জরুরি অবস্থা ঘোষণা

news image

৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তিব্বতের পার্বত্য অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ

news image

চীনের তিব্বতে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩

news image

গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়াল

news image

আফগান-পাকিস্তান বাহিনীর ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ 

news image

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ১১ জন নিহত

news image

শেষ বিদেশ সফরে যে সব দেশে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন

news image

যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিক ভবনের ওপর বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ২

news image

৭ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে প্রয়োজন ‘রিয়েল আইডি’

news image

বর্ণিল আয়োজনে নতুন বছরকে স্বাগত জানালো বিশ্ব

news image

অর্থনীতিকে চাঙা করতে ২০২৫ সালে আরও সক্রিয় পদক্ষেপের ঘোষণা শি জিনপিংয়ের

news image

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

news image

সৌদি আরবে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২৩ হাজারের বেশি অভিবাসী গ্রেফতার

news image

১০০ বছর বয়সে কার্টারের মৃত্যু

news image

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্তে দুজন ছাড়া সবাই নিহত

news image

গাজায় ধ্বংসস্তূপে আটকা হাজারো প্রাণ

news image

জার্মানির পার্লামেন্ট ভেঙে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

news image

ইসরায়েলি হামলায় গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে নিহত ৫০