মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

বগুড়ায় তৈরি আরবের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘বিশত’ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

নিউজ ডেক্স ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৪১ পি.এম

সংগৃহীত ছবি

বিশত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে বিশেষ অনুষ্ঠান বা উদ্‌যাপনের ঐতিহ্যগত একটি পোশাক। মূলত আরবদের আভিজাত্য প্রকাশে পরা হয় এই পোশাক। ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে অধিনায়ক লিওনেল মেসির গায়ে পরিয়ে দেওয়া হয় বিশত। সে সময় পোশাকটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। 

শত শত বছর ধরে উপসাগরীয় দেশগুলোতে বিশেষ সব অনুষ্ঠানে পরা হয় পোশাকটি। সুদূর আরব ঐতিহ্যবাহী এ পোশাক বাংলাদেশের বগুড়ার এক পল্লীগ্রামে তৈরি হচ্ছে। নিয়মিত সরবরাহও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জেলার বিশত কারিগরদের ব্যস্ততাও বেড়েছে ব্যাপক।  

প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে যান নুর আলম। সেখানে ‘বিশত’ নামে বিশেষ ধরনের এক পোশাক তৈরি কারখানায় কাজ করেন তিনি। পাতলা কাপড়ে বিভিন্ন ধরনের সুতা দিয়ে নকশা করা তার কাজ ছিল। এক পর্যায়ে ‘বিশত’ তৈরিতে হাতের কাজের সবগুলোতে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি।

সৌদিতে কাজ করার কয়েক বছর পর নূর আলম কাতারে যান। সেখানেও নুর আলম এই বিশেষ ধরনের পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ শুরু করেন। পরে সেখানকার মালিককে প্রস্তাব দেন, এমন একটি কারখানা তিনি বাংলাদেশে স্থাপন করতে চান। দেশে কম মূল্যের শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে চান। তখন তার কাতারের তৎকালীন মালিক রাজি হলে দেশে এসে নুর আলমসহ ১০ জন শ্রমিক মিলে বিশত তৈরির কাজ শুরু করেন।

নুর আলম এখন দেশে থাকেন না। বেশিরভাগ সময় কাতার কিংবা সৌদি আরবে থাকেন। কারণ কাতারে ‘বিশত’ বিক্রি হয় বেশি । তার মেয়ে জামাইও একই কারণে কাতারে থাকেন। আর সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা দোকানে তিনি দেশে তৈরি ‘বিশত’ পাইকারি মূল্যে জোগান দেন।

বিশত আল নুর কারখানার কলেবর বাড়ছে। দুবছর আগেও যেখানে কাজ করতেন ৩০ জন। এখন সেখানে নারী পুরুষ মিলে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। আর এই কারিগররা সবাই  স্থানীয়। বিশত তৈরি করে এই শ্রমিকরা অনেক স্বচ্ছলও হয়েছেন। অনেকে নিজেদের পড়ালেখার খরচ এখান থেকেই বহন করছেন।

কারখানার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘কাঁচামাল’ কাপড় থেকে পূর্ণ একটি ‘বিশত’ তৈরি হতে ছয়টি ধাপ পার করতে হয়। ঐতিহ্যবাহী এই পোশাক তৈরি করতে একজন শ্রমিকের অন্তত সাতদিন সময় লাগে। প্রথমে কাপড় কেটে নিয়ে সেখানে নকশা কাজ শুরু করতে হয়। নকশার প্রথম ধাপকে বলা হয় হেলা। এরপর করা হয় তোপ তাশরিফ। ব্রুজ, মাকসার, বরদাক, সিলালাসহ প্রায় আট ধরনের নকশার সমন্বয়ে পূর্ণতা পায় ‘বিশত’।

কারখানার পুরোনো শ্রমিকদের মধ্যে একজন শফিকুল ইসলাম। সাত বছর ধরে নুর আলমের কারখানায় কাজ করছেন। এক সময় তিনি গাড়ির ওয়াশের কাজ করতেন। পরে এই কারখানা মালিকের কথা শুনে কাজ শিখেন। তার মতো কাজ শিখে বেশ কয়েকজন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে বিশত তৈরির কারখানায় চাকরি পেয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, কাজ শেখার পরে প্রথম দিকে ৮-৯ হাজার টাকা পেয়েছি। এখন মাসে ১৫ হাজার টাকা আসে। আমার সঙ্গে কয়েকজন কাজ শেখার পর বিদেশে গেছে। সেখানে গিয়ে বিশতের কারখানায় কাজ করছেন তারা।  

নুর আলমের কারখানায় শুধু পুরুষ শ্রমিক নেই। অন্তত ১০ জন নারী এই কাজ করছেন। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সংসারে আয়ের জোগান দিচ্ছেন।

মোছা. তাসলিমা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ এখানে কাজ করে সংসার অনেক ভালো চলে। আমি এখানে তিন বছর ধরে কাজ করি। সপ্তাহে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাই।

সারা বছর চাহিদা থাকলেও ঈদ উপলক্ষ্যে কাজের পরিমাণ বেড়েছে। এই চাহিদা  ঈদুল আজহা পর্যন্ত থাকবে বলে জানান কারখানার ব্যবস্থাপক ও মালিকের মেয়ে জামাই মেহেরুল ইসলাম তুষার।

নুর আলম ও তার বড় মেয়ের জামাই রবিউল ইসলাম মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসা ও বিশতের অর্ডার নেওয়ার কাজ করেন। আর দেশের অংশটি দেখেন ছোট মেয়ের জামাই তুষার।

মেহেরুল ইসলাম তুষার বলেন, আমাদের চাহিদা ভালো। এখন যে কাজ শুরু হয়েছে এটি কোরবানির ঈদ পর্যন্ত চলবে। এই বিশতের দামটা ফিক্সড নয়। জরির কাজের ওপর এর দাম নির্ধারণ হয়। তারপরেও একেকটি বিশত ৩০-৪০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়।

বিশতের বাজার সম্পর্কে এই ব্যবস্থাপক জানান, এটি মধ্যপ্রাচ্যের যে পাঁচটি মুসলিম দেশ আছে, সেখানে এর চাহিদা। আমাদের দেশে বিশতের কোনো চাহিদা নেই। বছরে কত টাকার বিশত হয় এটা সঠিক বলা যাবে না। কারণ এটা কারিগরের ওপর নির্ভর করে। তবে বছরে গড়ে এক হাজার পিস বিশত তৈরি করা যায়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বগুড়া কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুর রহমান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই বিশত ওখানকার অনেক ডিমান্ডের পোশাক। আমাদের বগুড়ায় এটি তৈরি হচ্ছে। এই কাজটি বগুড়ায় প্রসারিত হচ্ছে। ওই একটি কারখানার দেখাদেখি সেখানে আরও দুটি কারখানা স্থাপন হয়েছে। তিনটি কারখানায় প্রায় শতাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে এর মাধ্যমে। 

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

ড্রোন শো জানিয়ে দিল ইতিহাসের নানা পর্ব

news image

বাংলাদেশে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

news image

কারাগার থেকে গণহারে মুক্তি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি: আবু হানিফ

news image

হানাহানি চাই না, শান্তির দেশ চাই: সেনাপ্রধান

news image

বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহাল

news image

ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হল

news image

যার যার মত করে বৈশাখ উদযাপন করুন: প্রধান উপদেষ্টা

news image

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হলো ১৭ ঘণ্টা পর

news image

আদানির কেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধের কারণে লোডশেডিং বাড়তে পারে

news image

আমাদের হৃদয়ে বাস করে এক-একটা ফিলিস্তিন: মিজানুর রহমান আজহারী

news image

দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশ রয়েছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

news image

মার্চ ফর গাজা: লাখো মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হলো 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন'

news image

শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়েছে: ফারুকী

news image

অ্যামনেস্টি উদ্বেগ জানালো মেঘনা আলমকে নিয়ে

news image

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল

news image

সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুকে 'সর্বকালের সেরা বিদ্যুৎ চোর' বললেন সিদ্দিকী নাজমুল

news image

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

news image

এবার 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নয়, 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'

news image

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন লোগো প্রকাশ

news image

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল

news image

দেশে হুমকির মুখে নারীর অবস্থান ও নিরাপত্তা: মহিলা পরিষদ

news image

৬০ কি.মি. বেগে ঝোড়ো হাওয়া: চার অঞ্চলে সতর্কতা

news image

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে রপ্তানিতে কোন প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

news image

শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

news image

বিশ্বকে বদলে দেয়ার মতো দুর্দান্ত আইডিয়া আছে বাংলাদেশের কাছে: প্রধান উপদেষ্টা

news image

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ এপ্রিল বসছেন বিএনপি নেতারা

news image

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী শমী কায়সার

news image

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ আইনজীবীর ওপর ক্ষেপে গেলেন হাজী সেলিম

news image

‘এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনা, নিহত ৩২২ জন’

news image

কারামুক্ত হয়েই জনতার তোপের মুখে সাবেক এমপি আজিজ