বুধবার ১৫ জানু ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
শিক্ষা

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে শিক্ষার্থীদের পাশে পাচ্ছে না ছাত্রলীগ

নিউজ ডেক্স ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৯ এ.এম

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের খুনের পর থেকে বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের রাতের আঁধারে বহিরাগত রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এই ঘটনা নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ডাক দেয়। 

এদিকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে পাচ্ছে না ছাত্রলীগ। রোববার(৩১ মার্চ) ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব জোরপূর্বক বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সময় শিক্ষার্থীদের কেউ তাদের স্বাগত জানাননি। অন্যদিকে, বুয়েটে ফের ছাত্র রাজনীতি ফেরাতে আজ সমাবেশও করেছে ছাত্রলীগ। 

গত বুধবার রাতে বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশকে ঘিরে আন্দোলন-পাল্টা আন্দোলনের পর রোববার প্রকাশ্যে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বুয়েটে প্রবেশ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এ সময় তাদের স্বাগত জানাতে বা সমর্থন জানাতে কোনো বুয়েট শিক্ষার্থী উপস্থিত হননি। এমনকি ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ প্রবেশের খবর পেয়ে বুয়েটের মূল ফটক এবং হলগুলোর প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে বুয়েট শহিদ মিনারে ফুল দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। ফুল দিয়ে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে বুয়েট ত্যাগ করেন তারা। 

এ সময় বুয়েটের ছাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা সাদ্দাম-ইনানের সঙ্গে ছিলেন।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেও ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা আরও কিছুক্ষণ সেখানে ছিলেন এবং তারাও শহিদ মিনারে ফুল দেন। তবে এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কোনো শ্লোগান দিতে দেখা যায়নি।

রোববার সকাল সাতটা থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের শহিদ মিনারে জড়ো হওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেখানে যাননি। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আজ (রোববার) ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়া মানে এই নয় যে, বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি থেকে সরে এসেছে। এ দাবি বুয়েটের সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীর।’

তারা আরও বলেন, ‘আজ (রোববার) বুয়েটের ২০ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। কোনোরূপ অবস্থান-আন্দোলন বা বাধা ছাড়াই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ১ জন বাদে সকল শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল। ১২১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২১৪ জনই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এছাড়া শনিবার ২২ ব্যাচের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাতেও কোনো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি, অর্থাৎ শতভাগ অনুপস্থিত ছিল। এ থেকেই প্রমাণিত হয় শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। এই অবস্থান কতটুকু সুদৃঢ় তাও সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।’

বুয়েট আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না চাওয়া মানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মতাদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়। তারা বলেন, আমরা শুধু চাই না, ক্ষমতার লোভ ও অপচর্চা আবারো এসে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফেলুক। আমরা হিযবুত তাহরীরের সম্পূর্ণ বিপক্ষে এবং কারো শিবির-সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক ভাবে তার বহিষ্কার চাই।

এদিকে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাইলে বুয়েটে আবার ছাত্ররাজনীতি ফিরতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বুয়েট উপাচার্য। রোববার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক সমাবেশে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, বুয়েট প্রশাসনের কাছে আমাদের আহŸান থাকবে অনতি বিলম্বে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। যে নিয়ম আপনারা শুরু করেছেন সেটি কালাকানুন, সেটি কালো আইন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কোনো আইন নেই। যদি থেকেও থাকে সেটি সংবিধান বিরোধী। আমরা আজ শহিদ মিনার থেকে বুয়েট প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিচ্ছি অনতি বিলম্বে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। বুয়েট শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাব্বির সিট ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি ছাত্র রাজনীতিতে নেগেটিভ এলিমেন্ট রয়েছে। তবে এটাকে সংস্কার করতে হবে আরও ভালো ছাত্ররাজনীতি দিয়ে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে সংবিধান অবমাননা করা হয়, যাচ্ছেতাই ক্যাম্পাস কালচার তৈরি করে। অন্ধকার রাজনীতি চর্চা করবে মৌলবাদী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের গোষ্ঠীরা। হিজবুত তাহরির শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল ইমেইলে মেইল পাঠায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার, কম্পাসে কিউআর কোড লাগায় জঙ্গিবাদ চর্চার। আমরা চাই বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আধুনিকায়ন করে স্মার্ট ছাত্ররাজনীতি উপহার দেবে। তারা তাকলাগানো প্রযুক্তি তৈরি করে বাংলাদেশকে গর্বিত করবে। আপনারা বলেন, ছাত্ররাজনীতিতে র‌্যাগিং ও গেস্টরুম কালচার রয়েছে।  আপনারা শিক্ষার্থীরা আসুন, ছাত্ররাজনীতির স্ট্যান্ডার্ড  তৈরি করুন আমরা গণতান্ত্রিক ভাবে তা অনুসরণ করব।

ছাত্রলীগের সমাবেশের পর ছাত্ররাজনীতি চালুর বিষয়ে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘তখন (২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যা) যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত (ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা) নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাদের আবার উদ্যোগী হতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাইলে বুয়েটে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি ফিরতে পারে।’ 

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরা প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বুয়েটের শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ চায়, তাদের সাংবিধানিক অধিকার ফেরত চায়, তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চার সুযোগ চায়। সুতরাং তাদের এই যৌক্তিক চাওয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময়ই পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। 
বুয়েটে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যখন বুয়েটে প্রবেশ করি তখন বুয়েটের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে ছিল এবং তারা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে যথেষ্ট আগ্রহী।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেক নেতা-কর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ পাঁয়তারা রুখে দিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। 

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

বদলি হলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপ-সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

news image

তিন দফা দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের অনশন, শহীদ সাজিদ ভবনে তালা

news image

আগামী বছর প্রথম দিনই বই পাবে শিক্ষার্থীরা : শিক্ষা উপদেষ্টা 

news image

পৌষ্য কোটা বহালের দাবিতে চবি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন 

news image

ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম

news image

এবার শিক্ষাবর্ষের নতুন অধ্যায় ‘আমাদের চার নেতা’

news image

নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে থাকছে বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চ

news image

শিক্ষা কার্যক্রম শুরু অনিশ্চিত

news image

২০২৫ সালে নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে ছুটি ৭৬ দিন

news image

শিক্ষাকে বাদ দিয়ে কোন কিছু সম্ভব নয় : ড. মামুন আহমেদ

news image

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে ভর্তি শেষ করার নির্দেশ

news image

সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিকের স্কুল ভর্তির লটারি আজ

news image

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে মতানৈক্য

news image

মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে মামলার 

news image

সাত কলেজের পরীক্ষা স্থগিত মঙ্গলবার

news image

জাবিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত 

news image

জাবিতে চলছে প্রাণ-রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সংসদ নির্বাচন

news image

সৃজনশীল শিক্ষা মানুষ হতে সাহায্য করে : প্রধান উপদেষ্টা

news image

আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ

news image

নির্ভুল পাঠ্যবই বের করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

news image

এখনো নতুন একটি বইও আসেনি

news image

চবিতে শিবিরের নবীনবরণ  অনুষ্ঠান 

news image

ঢাকা সিটি কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

news image

এসএসসির ফরম ফিলআপ শুরু ১ ডিসেম্বর

news image

ষষ্ঠ ও সপ্তমের নতুন পাঠ্যবই মিলবে জানুয়ারিতে

news image

জবি শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান

news image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু 

news image

৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা 

news image

৬টি মেডিকেল কলেজের নতুন নামকরণ 

news image

শিক্ষার্থীদের ফের সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ