বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
লাইফস্টাইল

কথায় কথায় কসম দেওয়া কী জায়েজ?

নিউজ ডেক্স ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:০৩ পি.এম

আল্লাহ তাআলা কুরআনের  অসংখ্য জায়গায় বিভিন্ন বিষয়ে কসম করেছেন। এ কসমের রয়েছে অনেক শরয়ী বিধান। কসম শব্দটি আরবি। বাংলাতেও এটির ব্যবহার আছে। অর্থ শপথ। ইসলামি পরিভাষায় কসম` এমন এক শক্তিশালী বন্ধনকে বুঝায়, যার দ্বারা কসমকারী ব্যক্তি কোনো কাজ করা বা না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে থাকে।
অনেকে আছেন কথায় কথায় কসম করেন। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কসম করেন। তবে প্রয়োজনে শপথ করা জায়েজ। কথায় কথায় শপথ করা মাকরুহ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’ (সুরা: কলম, আয়াত ১০)।
কসমরে ধরন-
ইসলামি চিন্তাবিদগণ অন্যায়ভাবে করা কসমকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। এ কসমের ভালো ও মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। 
১. গামুস
অতীত বা বর্তমান সময়ের কোনো বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা কসম করা। এ ধরনের কসম করা কবিরা গোনাহ। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।

এ কসমের বিধান-
এ জাতীয় কসমের কোনো কাফফারা নেই। তবে এ কসমের কবিরা গোনাহ থেকে নিষ্কৃতি লাভের একমাত্র উপায় হলো আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা ও ইস্তিগফার করা। অবশ্য অনেকে কাফফার দেয়ার বিষয়েও মতামত দিয়েছেন।

২. মুনআ`ক্বিদাহ
ভবিষ্যতে কোনো কাজ করা বা না করার ওপর কসম করা। যদি কসম ভঙ্গ করে তাহলে কাফফারা দিতে হবে।

এ কসমের বিধান-
এ কসমের বিধান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্ত্র প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি (এ গুলো আদায়ে) সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোজা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। (সুরা মায়িদা : আয়াত ৮৯)

৩. লাগব :
কসমকারী ব্যক্তি অতীত বা বর্তমানের কোনো একটি বিষয়ে নিজের ধারণা অনুযায়ী কসম করেছে; অথচ বিষয়টি বাস্তবে তার ধারণা অনুযায়ী নয়। অর্থাৎ যে বিষয়ে কসম করেছে তা মিথ্যা।

এ কসমের বিধান
সকল ইমামদের মতে, এ কসমের কোনো কাফফারা নেই। আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা কসমকারীকে পাকড়াও করবেন না।

কথায় কথায় কসম খাওয়া অনুচিত  
কোরআন ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জীবনপথের পাথেয়। মানবিক জীবনাচারের সবকিছুই আমরা কোরআন ও রসুল (সা.) থেকে আমরা শিখি। সাংসারিক বিবাদ-বিসংবাদ মীমাংসা করার সুবিদিত পন্থা যেমন দাবির সপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা, আর সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকলে কসম করা, তেমনি আল্লাহ মানুষের এ পরিচিত পন্থা নিজেও অবলম্বন করেছেন। তিনি কোথাও ‘শাহাদাহ্’ শব্দের মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে জোরদার করেছেন, যেমন- ‘শাহিদাল্লাহু আন্নাহু লা-ইলাহা ইল্লাহু’ আবার কোথাও কসমের দ্বারা; যেমন- ‘ওয়ালআসরে’ ইত্যাদি।
অনেকে তো কথায় কথায় কসম করে। আবার অনেকের কথা- যারা আছে, যারা আলাপ-আলোচনার সময় দুই-তিন বাক্য পরপর কসম খায়। এটা নিন্দনীয়। সমাজে কিন্তু এদেরকে সর্বাপেক্ষা বড় মিথ্যুক ধারণা করা হয়। হাদিসেও এদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, ‘বেশি বেশি কসম খাওয়া মিথ্যাবাদীর আলামত।’ আল্লাহ তাআলার নাম ব্যতীত অন্য কোনো জিনিসের কসম করা নাজায়েজ।
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম
কসম একমাত্র আল্লাহ তাআলার নামেই করা যায়। আল্লাহ তাআলার নাম ব্যতীত অন্য কোনো জিনিসের কসম করা অনুচিত। এমনকি কোরআনের কসম করাও জায়েজ নয়, আল্লাহ তাআলা তার সৃষ্টির মধ্য থেকে যার নামে ইচ্ছা কসম করতে পারেন। কিন্তু সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা জায়েজ নেই। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মুখেই নির্বিবাদে গায়রুল্লাহর নামে কসম উচ্চারিত হয়। কসম মূলত এক প্রকার সম্মান, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের  পিতৃ পুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে। (বুখারী ,মুসলিম, মিশকাত, হাদিস ৩৪০৭)।
অন্য হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শিরক করল।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত, হাদিস ৩৪১৯)। অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে আমানত (আনুগত্য, ইবাদত, সম্পদ, গচ্ছিত দ্রব্য ইত্যাদি) এর নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, মিশকাত, হাদিস ৩৪২০)। সুতরাং কোরআনের, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে, ইত্যাদি দিয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ।
 রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের নিজের পিতার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। যদি কসম করতেই হয় তবে যেন আল্লাহর নামেই কসম করে। নতুবা চুপ করে থাকে।’ (বুখারি, হাদিস ৬৬৪৬)।
 
 পবিত্র কোরআনের সুরা আল-আসরেই রয়েছে সেগুলো। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘কসম যুগের; নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে। কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে এবং নেক আমল করে, সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরকে হকের ওপর অটল থাকার উপদেশ দেয় এবং একে অন্যকে ছবরের তাগিদ দেয়।’
কসমের পাঁচ পদ্ধতি

১. ওয়াজিব কসম: নিরপরাধ ব্যক্তির প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে শপথ করা ওয়াজিব। 
২. মুস্তাহাব: দুই মুসলমানকে মিলানো বা কোনো মুসলমানকে ক্ষতি থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে শপথ করা মুস্তাহাব। 
৩. মুবাহ বা জায়েজ: কোনো বৈধ জিনিস করা বা ছাড়ার ব্যাপারে শপথ করা জায়েজ। নিজের বৈধ অধিকার হাসিলের জন্য শপথ করাও জায়েজ।
 ৪. মাকরুহ: কোনো মাকরুহ কাজ করা বা কোনো মুস্তাহাব কাজ না করার শপথ করা মাকরুহ। 
৫. হারাম: মিথ্যা কথার কসম বা গুনাহে লিপ্ত হওয়া বা কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার শপথ করা হারাম। (আল মুগনি: ৯/৩৮৭-৮৯) 

যে বিষয়ে কসম করা হয়; সে বিষয় না মেনে চললে কসম ভেঙে যাবে। তখন এ কসমের জন্য কাফফারা আদায় করতে হবে। (সুরা: মায়িদা, আয়াত ৮৯, দুররুল মুখতার ৩/৭২৫, বাদায়েউস সানায়ে ৩/৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩)
অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে কসম করতে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ কসমের কারণেই মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী হবে। আবার কাফফারাও দিতে হবে।উপরে উল্লেখ্য  কোনোটিতেই কাফফারা আদায় করতে  সক্ষম না হলে ধারাবাহিক তিনটি রোজা রেখেও কাফফারা আদায় করতে পারে। কোরআনের শপথ করা নাজায়েজ হলেও কসম সংঘটিত হয়ে যায়।  আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল প্রকার অন্যায়, বাতিল ও মিথ্যা কসম করা থেকে হিফাজত করুন।

আরও খবর

news image

টানা নয়, কেনাকাটা সারুন বুঝে-শুনে

news image

সোনামনিদের নিয়ে ঝক্কিহীন শপিং যেভাবে করবেন

news image

ঈদ শপিংয়ে সতর্ক থাকুন

news image

ইফতারে ঠান্ডা পানি পান ঝুঁকিপূর্ণ

news image

ইফতারে সিদ্ধ ডিমে চাঙ্গা হোন

news image

ইফতারে আনুন ভিন্নতা: ক্রিমি ফ্রুট ফিউশন

news image

ইফতারে হালিম রেখেছেন কি?

news image

ইফতারে খান বেলের শরবত

news image

রোজায় সুস্থ থাকতে দই-চিড়া খান

news image

রোজায় সুস্থ থাকতে মেনে চলবেন যে বিষয়গুলো

news image

গুণের শেষ নেই ক্যাপসিকামে

news image

বিটরুট হলো ‘সুপার ফুড’, তবে...

news image

টমেটো খান, তবে অপরিমিত নয়

news image

প্রতিদিন অন্তত একটি গাজর খান

news image

দারুণ উপকারী দারুচিনি

news image

সুস্থ থাকতে আদা খান

news image

আগাছা হিসেবে জন্মালেও পুষ্টিগুণে ঠাঁসা বথুয়া শাক

news image

মেথি শাকের জাদুকরী প্রভাব

news image

পাট শাকে যেসব উপকার

news image

পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ডাঁটা শাক

news image

রোজায় সুস্থ থাকতে চিয়া সিডের সঠিক ব্যবহার

news image

গুণের অভাব নেই কলমি শাকে

news image

অবহেলা করবেন না নুনে শাক

news image

পুষ্টির খনি লাউ শাক

news image

লাউ যেন এক মহৌষধ!

news image

এই গরমে পাতে রাখুন পটোল

news image

খেতে ভুলবেন না গিমা শাক

news image

কাদা পানিতে জন্মালেও হেলেঞ্চা কিন্তু উপকারী

news image

কচুর ছড়া বা কচুমুখির নানা গুণ

news image

পুষ্টিগুণে ভরপুর কচুর লতি