মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

ঋণ করে খাদ্য চাহিদা মেটায় সাড়ে ২৫ শতাংশ পরিবার

নিউজ ডেক্স ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৫:৪০ পি.এম

ফাইল ছবি। ফাইল ছবি।

দেশের এক-চতুর্থাংশ পরিবার খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে ঋণ করে। অর্থাৎ, দেশের মোট সাড়ে ২৫ শতাংশ পরিবার ঋণ করে তাদের খাদ্য চাহিদা মেটায়। প্রতি পরিবারে এই ঋণের পরিমাণ গড়ে ৯০ হাজার ২৩ টাকা। পরিবারগুলো ঋণগ্রস্ত হওয়ার ফলে তাদের চাহিদামতো খাদ্য চাহিদা মোটানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষাসহ সামগ্রিকভাবে মানবজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সামনে পড়ছে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য। 

এজন্য চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আয়-ব্যয়ের অসঙ্গতি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি নেই। আয় কম, ব্যয় বেশি। পরিবারের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হয়। এর পরে বাড়তি ব্যয় অর্থাৎ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ডে যোগ দিলে নির্দিষ্ট আয় থেকে অর্থব্যয় হয়। এর ফলে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আত্মীয়, মহাজন অথবা এনজিও থেকে ঋণ করে খাদ্য চাহিদা মেটাতে হয়। এই চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে। 

শনিবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবিএস এবারই প্রথম ‘খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩’ প্রকাশ করল। মৌলিক চাহিদা পূরণে খানার (পরিবার) খাদ্য ব্যয়ের জন্য গৃহীত ঋণের অবস্থা, ঋণের উৎস, প্রাপ্ত ঋণের পরিমাণ, খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্য, ঋণ অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ সময় এবং এলাকাভেদে ঋণ পরিশোধের সময় যাচাই করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মোট খানার (পরিবার) উল্লেখযোগ্য অংশ সাড়ে ২৫ শতাংশ জানিয়েছে যে তারা খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য অর্থঋণ করেছে; অন্যদিকে সাড়ে ৭৪ শতাংশ খানা খাদ্য-ঘাটতির জন্য কোনো ঋণ নেয়নি। ঋণগ্রহণের হার পল্লী এলাকায় সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ; অন্যদিকে শহরাঞ্চলে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ ও সিটি করপোরেশনে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

ঋণগ্রহণের উৎস হিসেবে সর্বোচ্চ শতকরা ৬৮ দশমিক ২ ভাগ খানা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণগ্রহণ করেছে। এর পরেই আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণ নেয় ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, ব্যাংক থেকে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ, মহাজনদের কাছ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ও অন্যান্য উৎস থেকে ৩ শতাংশ পরিবার ঋণ নিয়ে খাদ্য চাহিদা মেটায়।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। কেবল স্বল্প আয়ের মানুষ নয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনেও প্রভাব পড়েছে। অনেকের সঞ্চয় ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। ঋণ করে চলতে হচ্ছে। এ জন্য সরকারের যেসব সুরক্ষা কর্মসূচি রয়েছে সেগুলোর ব্যাপ্তি, প্রাপ্তি ও স্থায়িত্ব বাড়াতে হবে। যাতে করে এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় বিঘ্ন না ঘটে।

তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তাও জড়িত। এর ফলে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য স্কুলে খাদ্য চালু করা, ফ্যামিলি কার্ড সেফটি, প্রাপ্তির ব্যাপ্তি বাড়ানো, স্বল্প মূল্যে খাদ্য সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনজিও থেকে ঋণগ্রহণের হার সর্বোচ্চ- যা পল্লী এলাকায় শতকরা ৬৯ দশমিক ৫ ভাগ, শহর এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় যথাক্রমে শতকরা ৬৫ দশমিক ৭ ও ৬১ দশমিক ১ শতাংশ।

পল্লী, শহরাঞ্চল এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ঋণ প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে ব্যাংক গড়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ দিয়ে থাকে যার পরিমাণ যথাক্রমে ১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৯ টাকা ও ২ লাখ ৪ হাজার ৫৭ টাকা এবং ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪১ টাকা। গড়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী সংস্থা ও উৎস এলাকাভেদে পৃথক পাওয়া গেছে। যেমন সিটি করপোরেশন এলাকায় এনজিও, শহরাঞ্চলে মহাজন ও পল্লী এলাকায় অন্যান্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিএসের প্রতিবেদনে। পল্লী এলাকায় গড় ঋণ প্রদানের পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার ৩২০ টাকা, শহরাঞ্চলে গড় ঋণ প্রদানের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশনে গড় ঋণ প্রদানের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৩ টাকা। সারাদেশে পরিবারপ্রতি গড় ঋণের পরিমাণ ৯০ হাজার ২৩ টাকা।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এখনো দেশে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর উপরে যারা আছে, তারাও যে খুব ভালো অবস্থায় আছে তাও না। এ ছাড়া অধিকাংশই নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। মানুষের আয় কমেছে। রোগ-ব্যাধি বা লেখাপড়া ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের মতো বাড়তি খরচের মুখে পড়লেই যাদের ঋণ করতে হয়। এটা সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার প্রতিফলন। এখান থেকে উত্তরণের প্রধান উপায় হচ্ছেÑ মানুষের আয় ও আয় বাড়ানোর সুযোগগুলো বাড়াতে হবে। এ জন্য শিক্ষা, দক্ষতা, স্বাস্থ্যসেবা এগুলো যদি সামাজিকভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা হলে আয় বাড়ানোর সুযোগ তারা নিজেরাই খুঁজে নিতে পারবে।

নবীন নিউজ/পি
 

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ টিউলিপের

news image

ড্রোন শো জানিয়ে দিল ইতিহাসের নানা পর্ব

news image

বাংলাদেশে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

news image

কারাগার থেকে গণহারে মুক্তি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি: আবু হানিফ

news image

হানাহানি চাই না, শান্তির দেশ চাই: সেনাপ্রধান

news image

বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরায়েল' শর্ত পুনর্বহাল

news image

ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হল

news image

যার যার মত করে বৈশাখ উদযাপন করুন: প্রধান উপদেষ্টা

news image

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হলো ১৭ ঘণ্টা পর

news image

আদানির কেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধের কারণে লোডশেডিং বাড়তে পারে

news image

আমাদের হৃদয়ে বাস করে এক-একটা ফিলিস্তিন: মিজানুর রহমান আজহারী

news image

দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফিলিস্তিনিদের পাশে বাংলাদেশ রয়েছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

news image

মার্চ ফর গাজা: লাখো মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হলো 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন'

news image

শেখ হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়েছে: ফারুকী

news image

অ্যামনেস্টি উদ্বেগ জানালো মেঘনা আলমকে নিয়ে

news image

মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল

news image

সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুকে 'সর্বকালের সেরা বিদ্যুৎ চোর' বললেন সিদ্দিকী নাজমুল

news image

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

news image

এবার 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নয়, 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'

news image

বাংলাদেশ পুলিশের নতুন লোগো প্রকাশ

news image

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল

news image

দেশে হুমকির মুখে নারীর অবস্থান ও নিরাপত্তা: মহিলা পরিষদ

news image

৬০ কি.মি. বেগে ঝোড়ো হাওয়া: চার অঞ্চলে সতর্কতা

news image

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে রপ্তানিতে কোন প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

news image

শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

news image

বিশ্বকে বদলে দেয়ার মতো দুর্দান্ত আইডিয়া আছে বাংলাদেশের কাছে: প্রধান উপদেষ্টা

news image

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ এপ্রিল বসছেন বিএনপি নেতারা

news image

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী শমী কায়সার

news image

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ আইনজীবীর ওপর ক্ষেপে গেলেন হাজী সেলিম

news image

‘এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনা, নিহত ৩২২ জন’