বুধবার ১৫ জানু ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
শিক্ষা

‘কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, আজ আমি ফেল’

নিউজ ডেক্স ১৭ মার্চ ২০২৪ ০২:০০ পি.এম

কাজী ফারজানা মিম কাজী ফারজানা মিম

শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ঠিক সে সময়ে উঠে এল আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

অবন্তিকার মতো শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানি ও কুপ্রস্তাবের শিকার হন ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের ১৩তম আবর্তন ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম। 

সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

মিম জানান, দুই বছর আগে যৌন হয়রানি ও মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ তুলে এখনো বিচার পাননি তিনি। উল্টো তাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে। এমনকি তার মা-বাবাকে অভিযোগ প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ওই ছাত্রী বলেন, ‘কুপ্রস্তাবে রাজি না হয়ে অন্যায় করেছি বলে আমার মনে হয়। কারণ, আজকে আমি ফেল। আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে। কোনো মহিলা টিচারের অনুপস্থিতিতে আমাকে দরজা আটকে জোর জবরদস্তি করা করা হয়। আমি হয়ত তার মতো সাহসী হতে পারি নাই। তার জন্য হয়ত আমি মারা যাই নাই। কে জানে এর পর আমি বেঁচে থাকব কি না। আমাকে একঘরে করে দিয়েছে শিক্ষকেরা। আমাকে অনার্সের ভাইভায় ফেল করানো হয়েছে। প্রতিবাদের ফলাফলস্বরূপ আজকে আমি অনার্স ফেল। একজন শিক্ষক আমাকে ৪০ মার্কের ইনকোর্স পরীক্ষায় ডাবল শূন্য দিয়েছে। এটা তো খুন। এভাবে সমাজে একের পর এক মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে খুন করে ফেলা হচ্ছে।’

‘আমি যখন অভিযোগ দায়ের করি, তখন কোনো সেল ছিল। কোনো সেল না থাকায় আমাকে সরাসরি উপাচার্য স্যার বরাবর অভিযোগ দায়ের করতে হয়েছিল। উপাচার্য স্যার বরাবর অভিযোগ দায়ের করায় আমার ওপর অনেক ধরনের প্রেশার আসে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি তারা আমার গ্রামের বাড়িতে পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আমার বাবা-মা অসুস্থ, তাদের ওপর প্রেশার করেছে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য। অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় আমাকে বিভাগের রুমে কোনো মহিলা টিচারের অনুপস্থিতিতে দরজা আটকে জোর জবরদস্তি করা করা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সাংবাদিক সমিতি আছে সেখানে ওই টিচার ক্ষমতাবলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেছে আমার প্রসঙ্গে যেন কোনো নিউজ না আসে।’

ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘আমি যে এত স্বাভাবিকভাবে কথা বলার চেষ্টা করছি- আমি ভেতর থেকে এতটা স্বাভাবিক না। আমার একটা অভিযোগ দায়ের করার কারণে ওইটা যেন অপরাধ হয়ে উঠেছে।আমার ক্লাসমেটরা আমার সঙ্গে মিশতে ভয় পায়। আমি দুই বছর যাবৎ কারও সঙ্গে মিশতে পারি না। আমাকে একা করে ফেলা হয়েছে। ওই শিক্ষক ডিপার্টমেন্ট বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াই। উনাকে কোনো লিভে পাঠানো হয় নাই। আমাকে এইট সেমিস্টারে ফেল করানো হয়েছে। আমার এসাইমেন্ট টিচাররা নিতে চাই না। আমাকে সেভেন সেমিস্টারে ফেল করানো হয়েছে। আমাকে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ভাইভায় ফেল করানো হয়েছে।’

‘আমি আজীবন পড়াশোনা ব্যতীত কিছুই করিনি। আমি ননপলিটিক্যাল ছাত্রী। আমি কোনো অর্গানাইজেশনে জড়িত না। সেখান থেকে আমার জন্য সহজ ছিল না প্রতিবাদ করার। আমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণেআমি প্রতিবাদ করেছি। সেই  প্রতিবাদের ফলাফল স্বরূপ আজকে আমি অনার্স ফেল। প্রতিবাদ করা আমার অন্যায় ছিল। আমার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আমি মিশতে পারি না। আমি যতই হাই ক্যালিভার আমি প্রকাশ করি- আমি  মার্কস পাই না। আমার কি তাহলে উচিত ছিল ওই শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি হওয়া। আমি রাজি না হয়ে অনেক বড় অন্যায় করেছি। আমি মার্কসিট পুণর্মূল্যায়নের আবেদন জানালেও তা করা হয়নি। এবার চেয়ারম্যান স্যার উনার দুইটা কোর্সে আমাকে ১০০ এর মধ্যে তিন দিয়েছেন। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি কতটুকু খারাপ মেধার অধিকারী হলে আমি তিন পাই। আমার প্রসঙ্গে আমি বুজতে পারি আমার মেরুদণ্ড কতটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমাকে কাউন্সিলিং নিতে হয়। আমিতো স্বাভাবিক না। আমার বিভাগে এমনকি ক্যাম্পাসে অনেক আছে- এই একটা কারণে কেউ প্রকাশ করে না।’

‘আজকে যে অবন্তিকা মারা গেল, দেড় বছর আগে থেকে যুদ্ধ করে আসছে- মেয়েটা যদি বিচার পেত তাহলে কি আজ মারা যেত? এটা তো খুন। এভাবে সমাজে একের পর এক মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের খুন করে ফেলা হচ্ছে। সে বিচার পেলে আজ এই ঘটনা ঘটত না।’

অভিযুক্ত কে ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ছাত্রী বলেন, ‘উনি ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের একজন এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার। উনি সিনেমা নির্মাণ করেন, আবার আমার বিভাগের লেকচারার ছিলেন। এখনো উনি বহল আছেন। উনি আমাকে কাজে জন্য উনার অফিস রুমে ডেকে নিয়ে হ্যারাজ করেন। এটা নিয়ে আমি অনেকদিন ভুগেছি। যখন আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে- আমাকে প্রতিনিয়ত ফেল করানো হচ্ছে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলা হচ্ছে। আমার বাবাকে বলা হচ্ছে-আপনার মেয়েকে বহিষ্কার করে দেব। নতুন করে যে কিমিটি করা হয়, এখন যিনি ভিসি আছেন তিনি ওই কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। ভিসি সাদেকা হালিম ম্যাডাম অনেক নারী বান্ধব।’

‘কিন্তু ম্যাডামের উপস্থিতি থাকা স্বত্বেও আমি এখন পর্যন্ত বিচার পেলাম না। কয়েক দফা রিপোর্ট আসা স্বত্বেও ওই আবু সাইদ ইমন যিনি শিক্ষক এবং উনাকে সাহায্যকারী আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান স্যার অধ্যাপক জুনাইদ হালিম এতগুলো তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসার পরও উনারা সুপ্রিম কোর্টে রিট করেছন। একজন শিক্ষক কতটা বেহায়া হলে নিজের দোষ ঢাকতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। সুপ্রিম কোর্ট থেকেও তারা হেরে গেছেন। তারা সিন্ডিকেটের প্রতিবেদন না মেনে সুপ্রিম কোর্টে রিট করেছেন। উনি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের একজন এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার বলে ক্ষমতা বলে কি সকাল জায়গায় পার পেয়ে যাবেন’, যোগ করেন এই ছাত্রী।

অন্যরা অভিযোগ না করার বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেন, ‘ফেল করার ভয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাইদ ইমনের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা কোনো কথা বলেন। আমিতো ফেল করে গেছি। আমারতো স্টুডেন্ডশিপের কোনো ভয় নাই। আমি রাস্তা দিয়ে যখন চলাফেরা করি-তখন আততায়ীরা আমাকে ফেরে ফেলতে পারে। আমি সারাক্ষণ অনিরাপত্তায় ভুগি। আমার পরিবার অনিরাপত্তায় ভোগে। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না বা প্রকাশ করছে না তারাও যে নিরাপদ না বিষয়টা তেমন না। একজন শিক্ষার্থী যখন যৌন হয়রানির অভিযোগ দেয়-তখন তার চরিত্র নিয়ে যেসব কথা বলা হয় তা প্রকাশ করা যায় না। আমার বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে যখনই কেউ কথা বলেন-তখনই আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেন।’

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

ঢাবি ইসলামিক হিস্ট্রি বিভাগে প্রথম আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা সম্পন্ন

news image

বদলি হলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপ-সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

news image

তিন দফা দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের অনশন, শহীদ সাজিদ ভবনে তালা

news image

আগামী বছর প্রথম দিনই বই পাবে শিক্ষার্থীরা : শিক্ষা উপদেষ্টা 

news image

পৌষ্য কোটা বহালের দাবিতে চবি কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন 

news image

ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম

news image

এবার শিক্ষাবর্ষের নতুন অধ্যায় ‘আমাদের চার নেতা’

news image

নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে থাকছে বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চ

news image

শিক্ষা কার্যক্রম শুরু অনিশ্চিত

news image

২০২৫ সালে নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে ছুটি ৭৬ দিন

news image

শিক্ষাকে বাদ দিয়ে কোন কিছু সম্ভব নয় : ড. মামুন আহমেদ

news image

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে ভর্তি শেষ করার নির্দেশ

news image

সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিকের স্কুল ভর্তির লটারি আজ

news image

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে মতানৈক্য

news image

মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে মামলার 

news image

সাত কলেজের পরীক্ষা স্থগিত মঙ্গলবার

news image

জাবিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত 

news image

জাবিতে চলছে প্রাণ-রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সংসদ নির্বাচন

news image

সৃজনশীল শিক্ষা মানুষ হতে সাহায্য করে : প্রধান উপদেষ্টা

news image

আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ

news image

নির্ভুল পাঠ্যবই বের করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

news image

এখনো নতুন একটি বইও আসেনি

news image

চবিতে শিবিরের নবীনবরণ  অনুষ্ঠান 

news image

ঢাকা সিটি কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

news image

এসএসসির ফরম ফিলআপ শুরু ১ ডিসেম্বর

news image

ষষ্ঠ ও সপ্তমের নতুন পাঠ্যবই মিলবে জানুয়ারিতে

news image

জবি শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান

news image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু 

news image

৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা 

news image

৬টি মেডিকেল কলেজের নতুন নামকরণ