বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
ধর্ম

খতমে তারাবীতে তাড়াতাড়ি পড়তে গিয়ে ভুল যেনো না হয়

নিউজ ডেক্স ১০ মার্চ ২০২৪ ০৪:১৩ পি.এম

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান। রমজান মাস সবর ও সংযমের মাস। ইবাদত ও বন্দেগির মাস। কোরআন নাজিলের মাস। বেশি বেশি তেলাওয়াত করা ও তেলাওয়াত শোনার মাস। রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল রাতের তারাবি। রমজানে আমরা অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত করি। অনেক বেশি নামাজ পড়ি, তেলাওয়াত করি, জিকির-আজকারে অনেক বেশি সময় কাটাই। 

রমজানকে বলা হয় ইবাদতের বসন্তকাল।

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন মাজিদে অনেক আয়াত রয়েছে, হাদিসে বহু ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেসব আয়াত আর হাদিস পড়ে ও শুনে আমরা ইবাদতের প্রতি আকৃষ্ট হই, বেশি বেশি ইবাদতে সময় কাটাই। কিন্তু আমাদের অসচেতনায় কিছু ত্রুটির কারণে আমাদের ইবাদতগুলো সুন্দর হয় না। আমরা তেমন কিছু বিষয় নিয়েই এখানে আলাপ করবো।
 
কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে রমজানে কোরআনের সাথে আমাদের আলাদা একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত তেলাওয়াত করা, ঘরের সবাইকে তেলাওয়াতের প্রতি তাগিদ দেওয়া, রাতে তারাবিহের নামাজে তেলাওয়াত করা ও শোনা আমাদের সাধারণত হয়েই থাকে। তবে এক্ষেত্রে একটা ভুল আমরা ভীষণভাবে করে বসি, সেটা হলো বেশি তেলাওয়াত করতে গিয়ে তেলাওয়াত দ্রুত করে ফেলি।
 
দ্রুততার কারণে মাঝে মাঝে আমাদের উচ্চারণগুলো সুন্দর হয় না, অক্ষর ও শব্দের উচ্চারণ অশুদ্ধ হয়ে যায়, কখনো অস্পষ্ট হয়ে যায়, যা মোটেই উচিত নয়। কিছু কিছু মসজিদে তারাবিহের নামাজেও দেখা যায়, অনেক দ্রুত তেলাওয়াত করতে। দ্রুততার কারণে কোরআনের হক আদায় হয় না। কখনো কখনো তো নামাজ ফাসেদ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
 
কোরআন কীভাবে তেলাওয়াত করতে হবে, তার নির্দেশনা আল্লাহ তাআলা কোরআনের মাঝেই আমাদেরকে দিয়েছেন। সুল সা.-এর জীবনে সেই তেলাওয়াতের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। রসুল সা. কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন কোরআন তেলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে, সুস্পষ্টভাবে। (সুরা মুযযাম্মিল: ০৪)
 
হযরত আনাস রা.কে রসুলুল্লাহ সা.-এর তেলাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, নবীজি সা. শব্দগুলোকে টেনে টেনে পড়তেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম পড়ে বললেন যে, তিনি আল্লাহ, রহমান এবং রহিম শব্দকে টেনে পড়তেন। (সহিহ বুখারি: ৫০৪৬)
 
উম্মে সালামা রা.কেও একই প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন, নবীজি সা. প্রতিটি আয়াত আলাদা আলাদা করে পড়তেন এবং প্রতি আয়াতের পরে থামতেন। তিনি আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন বলে থামতেন। তারপর আর রাহমানির রহিম বলে থামতেন। তারপর মালিকি ইয়াওমিদীন বলে থামতেন। (আবু দাউদ ১৪৬৬, সুনানে তিরমিজি ২৯২৭)
 
যারা খুব দ্রুত তেলাওয়াত করে, তাদের ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। দ্রুত তেলাওয়াত করতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা কুরআন তেলাওয়াত করছিলাম এমন সময় রসুল সা. এলেন। তখন আমাদের সাথে কিছু গ্রাম্য মানুষ ছিলো, কিছু অনারব মানুষও ছিলো। 
 
রসুল সা. বললেন, তোমরা কুরআন পড়ো, তোমরা প্রত্যেকেই উত্তম মানুষ। আর অচিরেই এমন সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে, যারা কোরআনকে সোজা করবে, যেভাবে তীর সোজা করা হয়। (তারা তাজবিদ নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করবে।) আর তারা কুরআন পাঠে খুব তাড়াহুড়া করবে, অপেক্ষা করে আস্তে ধীরে তেলাওয়াত করবে না। (সুনানে আবু দাউদ: ৮৩০) 
 
প্রায় একই ধরণের হাদিস সাহাবি হযরত সাহাল রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত করছিলাম এমন সময় রাসুল সা. এলেন। তিনি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কিতাব একটাই। আর তোমাদের কেউ লাল, কেউ সাদা আবার কেউ কালো। (তোমরা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ ও ভিন্ন ভিন্ন জাতির মানুষ।) তোমরা ওই সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের পূর্বে কুরআন পড়ো, যারা কুরআন সোজা করবে যেভাবে তীর সোজা করা হয়। আর তারা কুরআন পাঠে খুব তাড়াহুড়া করবে, অপেক্ষা করে আস্তে ধীরে তেলাওয়াত করবে না। (সুনানে আবু দাউদ ৮৩১)
 
আমরা কুরআন মাজিদ দ্রুত তেলাওয়াত করি। অন্যান্য কিছু আমলও খু্ব দ্রুত করার চেষ্টা করি। আমরা মনে করি, দ্রুত তেলাওয়াত করে যতো বেশি পড়তে পারবো, তাড়াহুড়া করে যতো বেশি আমল করতে পারবো, ততো বেশি সাওয়াবের অধিকারী হতে পারবো। এবং কেয়ামতের দিন বেশি হওয়াটা আমাদের জন্য লাভজনক হবে। 
 
এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে, কিয়ামতের দিন আমাদের আমল গণনা করা হবে না। যে কে কতো পারা তেলাওয়াত করলো, কতো খতম শেষ করলো বা কতো রাকাত নামাজ পড়লো; এসব দেখা হবে না। বরং মিজানের পাল্লায় আমাদের আমলগুলো পরিমাপ করা হবে। ওজন করা হবে। যেমন কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, কিয়ামতের দিন সঠিকভাবে আমলগুলো ওজন করা হবে, সুতরাং যাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম ও কৃতকার্য হবে। (সুরা আরাফ: ০৮) 
 
এজন্য তাড়াহুড়া করে আমলের সংখ্যা না বাড়িয়ে আস্তে ধীরে আমল করে আমলের গুণগত মান বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে, সে সন্তোষজনক জীবনে থাকবে। (সুরা করিয়াহ ৬,৭)
 
আমাদের আমলের সংখ্যা বাড়ানো বেশি প্রয়োজন না কি ওজন বাড়ানো বেশি করা প্রয়োজন, এ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. অনেক সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমলের ওজন ইখলাস তথা আন্তরিকতা ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যতার কারণে বেড়ে যায়। যার আমল আন্তরিকতাপূর্ণ ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সংখ্যায় কম হলেও তার আমলের ওজন বেশি হবে। 
 
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সংখ্যায় অনেক আমল করবে, নামাজ, রোজা, দান-সদকা, হজ-ওমরা অনেক করবে, কিন্তু আন্তরিকতা ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্য কম হবে, তার আমলের ওজনও কম হবে। মানুষ আমলের যে পুঁজি নিয়ে আল্লাহর আদালতে আসবে তা ভারী না হালকা, তার ভিত্তিতে সেখানে ফায়সালা অনুষ্ঠিত হবে। (মাজমুল ফাতাওয়া লিশাইখিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ: ১০/৭৩৫–৭৩৬) 
 
সুতরাং কুরআন তেলাওয়াতসহ সকল প্রকার আমলের ব্যাপারে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। আল্লাহর নির্দেশনা ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতে হবে। ইমাম গাজালি রহ. বলেছেন, অনেক মানুষ এমন রয়েছে, তারা কুরআন তেলাওয়াত করে। কিন্তু কুরআন তাদেরকে অভিশাপ দিতে থাকে। (ইয়াহইয়ু উলুমিদ্দীন ১/৩২৪) 
 
এর ব্যাখ্যায় অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম বলেছেন, যারা দ্রুত তেলাওয়াত করে, অক্ষরগুলো স্পষ্টভাবে পড়ে না, উচ্চারণ সুন্দর করে না কুরআন তাদেরকে অভিশাপ দেয়। আমরা কুরআনের অভিশাপ থেকে বেঁচে থাকি।
 
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. বলেছেন যে ব্যক্তি চায় সে আল্লাহ ও তার রসুলকে বেশি ভালোবাসুক এবং বেশি ভালোবাসা পাক, সে যেন কুরআন মাজিদ দেখে তেলাওয়াত করে। (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান ২২১৯) 
 
আরেক হাদিসে হযরত আবু উমামাহ(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল সা.-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে। তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে। (সহিহ মুসলিম ১৯১)
 
সুতরাং আমাদের জন্য উচিত হবে, রমজানে এবং রমজানের বাইরে, যখনই আমরা তেলাওয়াত করবো; এমনভাবে কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত করবো, যে তেলাওয়াত আমাদের জন্য আল্লাহ ও তার রসুলের নৈকট্য লাভের মাধ্যম হবে। ভালোবাসা পাওয়ার উপায় হবে। মিজানের পাল্লা ভারী হওয়ার কারণ হবে। যে তেলাওয়াত আমাদের জন্য সুপারিশকারী হবে। আমাদের তেলাওয়াত করা ও তেলাওয়াত শোনা যেন কোনোভাবেই আমাদের জন্য অভিশাপ না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজার বিশেষ সওয়াব

news image

গোর-এ-শহীদে সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

news image

ঈদের প্রথম জামাত জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত

news image

চাঁদপুরের অর্ধশতাধিক গ্রামে আজ ঈদ

news image

যেভাবে আদায় করব ফিতরা

news image

জুমাতুল বিদার মাহাত্ম্য

news image

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

news image

ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ জানালো আবহাওয়া দপ্তর

news image

ফজরের আজানের সময় সেহরি খেলে রোজার বিধান কী?

news image

রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য

news image

জাকাত: ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান

news image

প্রথম তারাবিতে মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়

news image

আগাম রোজা পালন পিরোজপুরের ১০ গ্রামে

news image

সৌদির সঙ্গে কাল রোজা রাখবেন ভোলার ৫ হাজার মানুষ

news image

সৌদিতে শনিবার থেকে রোজা

news image

রমজানে অফিস সময় নির্ধারণ

news image

পহেলা মার্চ রোজা, ৩৩ বছর পর দেখা মিলবে ‘বিরল’ দিনের

news image

রোজায় ওমরাহ পালনকারীদের বরণ করতে সৌদি আরবের প্রস্তুতি

news image

দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা

news image

সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবে-বরাত আজ

news image

দুপুরে আখেরি মোনাজাতে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

news image

আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হল টঙ্গীর তুরাগতীর

news image

রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ

news image

মধ্যরাত থেকে ইজতেমা এলাকায় বন্ধ থাকবে গণপরিবহন 

news image

টঙ্গীর তুরাগে বিশ্ব ইজ‌তেমা শুরু কাল

news image

চলন্ত ট্রেনে নামাজ পড়ার নিয়ম

news image

বান্দার জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে যোগসূত্র তৈরী হয় : ছারছীনার পীর ছাহেব

news image

যুবক বয়সের তওবা মহান আল্লাহর কাছে অত্যাধিক প্রিয় : ছারছীনার পীর সাহেব

news image

নফল ইবাদত মুমিনের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন 

news image

বিশ্ব ইজতেমা আগামী জানুয়ারিতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা