২০০৮ সালের বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বিধিমালার বিধি ৯-এর উপবিধি ১ অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্ধারিত ১৪০টি প্রতীক থেকে প্রতীক বাছাই করতে পারবে। এই বিধির সংশোধন আনা হয় ২০১৭ সালে।
এ বছরেই সংশোধিত বিধিতে ৬৪টি প্রতীক উল্লেখ করা হয়। এই প্রতীকগুলো থেকেই ৪৯টি নিবন্ধিত দল তাদের পছন্দমতো প্রতীক কিংবা 'মার্কা' সংগ্রহ করতে পারেন।এ সময় বিভিন্ন প্রতীক রাজনৈতিক দলের পরিচয়স্বরূপ হয়ে থাকে। তাই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা নিজেদের প্রতীক চেনানোর জন্য পরিশ্রমও করে অনেক বেশি। ব্যানারে-পোস্টারে ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। সব সময়ই শোনা যায় '...মার্কায় ভোট দিন' স্লোগান।
আনুষ্ঠানিক প্রচারযুদ্ধ শুরু হলে প্রার্থীরা ছুটে যাবেন ভোটারদের দুয়ারে। ভালোবাসা ,ভরসা আর মিষ্টি কথায় ভোটারদের কাছে টানতে চাইবেন। কিন্তু প্রার্থীদেরকে জনসাধারনরা কতোটুকু জানেন বা চিনেন? মনে করা হয়, নির্বাচন প্রতীক যখন নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন জনসাধারণের কথা ভেবেই নির্ধারিত হয়েছিল। অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষও যাতে চিহ্ন দেখে ভোট দিতে পারে, তার জন্য নেওয়া হয়েছিল এই ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে মূলত দুটি প্রতিকে ভোট হয়। আর এই দুটি মার্কা হলো নৌকা ও ধানের শীষ। আর এই দুই মার্কায় প্রার্থী হয়ে ভোট করার বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হচ্ছেন দুই রাজনীতিক। ধানের শীষ উপমহাদেশের এক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক প্রতীক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এলো এই ধানের শীষ প্রতীক?
ধানের শীষ প্রতীকটির আবির্ভাব হয়েছিল জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে। ১৯৫৭ সালের ১৮ই মার্চ পররাষ্ট্রের বিষয়ে মত পার্থক্যের কারণে মাওলানা ভাসানী তার নিজের প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন।
ষাটের দশকে বিশ্বজুড়ে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রভাব পড়ে অখণ্ড ন্যাপেও। ১৯৬৭ সালে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে চীনপন্থী ন্যাপ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের খান আবদুল ওয়ালি খানের নেতৃত্বে মস্কোপন্থী ন্যাপের পথচলা শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তান ওয়ালি ন্যাপের সভাপতি হন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, যা পরে মোজাফফর ন্যাপ নামে পরিচিতি পায়।
দল বিভক্তির পর মোজাফফর ন্যাপ পার্টি তার প্রতীক হিসাবে কুঁড়েঘর এবং ভাসানী ন্যাপ পার্টি ধানের শীষ চূড়ান্ত প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়ে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। উক্ত নির্বাচনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৮.৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। অপর দিকে মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ ভোট পায় ৫.৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৭ বছর পর যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠিত হয়, তখন ভাসানীর অধিকাংশ ন্যাপ কর্মী দলটিতে যোগ দেন। দল গঠনের পর থেকেই ধানের শীষ প্রতীকটি বিএনপি ব্যবহার করতে শুরু করে।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করা হয় ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। দেশের দ্বিতীয় এই সংসদ নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতীক ছিল এটি। ভাসানী ন্যাপের বড় একটি অংশের যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে
১৯৭৮ সালে বিএনপির জন্ম হয়। এই অংশটির নেতৃত্ব ছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। জননেতা মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর ভাসানী ন্যাপের সভাপতি হন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকটি বহাল রেখেছে বিএনপি।
ধানের শীষের পর কৃষির অনন্য প্রতীক হিসেবে যে নামটি উঠে আসে, সেটি হলো লাঙ্গল।
অবিভক্ত ভারতে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল লাঙ্গল। পরবর্তী সময়ে লাঙ্গলের হাল ধরেন বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নেতা আতাউর রহমান খান। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে তিনি ঢাকা ১৯ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৮৪ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে আতাউর রহমান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পাশাপাশি বিলুপ্তি ঘটে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের। পরবর্তী সময়ে লাঙ্গল প্রতীকটি গ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এটি নিয়েই প্রতিবছর নির্বাচনে অংশ নেয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নৌকার আগে 'লাঙ্গল' প্রতীকটি ব্যবহারের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল লাঙ্গল। তাই তৎকালীন পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের বাধায় লাঙ্গল প্রতীক ছেড়ে নৌকার মাঝি হতে হয় যুক্তফ্রন্টকে।
কৃষিভিত্তিক প্রতীক নিয়ে অন্যান্য দলও অবশ্য থেমে থাকেনি। রাজনৈতিক দলের পছন্দের তালিকায় কাস্তে, কোদাল, সোনালী আঁশ সবই আছে। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতীক কাস্তে, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির প্রতীক কোদাল। পাশাপাশি নতুন নিবন্ধিত দল তৃণমূল বিএনপির প্রতীক সোনালী আঁশ।
ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় তার 'বাঙালির ইতিহাস' গ্রন্থে প্রাচীন বাঙালির খাদ্যাভ্যাস প্রসঙ্গে লিখেছেন, 'ইতিহাসের ঊষাকাল হইতেই ধান্য যে-দেশের প্রথম ও প্রধান উৎপন্ন বস্তু, সে-দেশে প্রধান খাদ্যই হইবে ভাত তাহাতে আশ্চর্য হইবার কিছু নাই।' বাংলার মানুষের প্রধান খাবার ভাত আর বাংলার মাঠে মাঠেই ধানের দেখা মেলে। তাই গ্রামীণ ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে ন্যাপ প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে ধানের শীষকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের প্রতীকে কৃষির ছোঁয়া পঞ্চাশের দশক শেষ থেকেই জনপ্রিয় হতে শুরু করে। গ্রামবাংলার জনসাধারণের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে 'ধানের শীষ' প্রতীকটিকে ন্যাপ তাদের মার্কা হিসেবে বেছে নিয়েছিল সে সময়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১২টি নির্বাচন পেরিয়ে গেলেও প্রতীকে নদী এবং ক্ষেতের ছোঁয়া যেন এখনো বহাল আছে।
নবীন নিউজ/জা
প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে লাল শাপলা
পর্তুগালে স্থায়ী ভাবে থাকার সুবিধা বন্ধ
বঙ্গোপসাগরের যে দ্বীপে মানুষ গেলে আর জীবিত ফিরতে পারে না
২ মিনিটে হাঙরকে একাই গিলে ফেললো তিমি
যে ৬টি কাজ করে আপনি নিজের জীবন নিজেই নষ্ট করছেন
‘মৃত্যুর’ নাম্বার পড়েছে লক্ষ্মীপুরের ১৫ হাজার গাছে!
‘নারীর বিনা বেতনে করা কাজের স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি স্মার্ট হবে না’
মাটি খুঁড়তেই বের হলো ২ হাজার বছর আগের শত শত সমাধি
মাছ কী ঘুমায়?
হিজাব পরে আলোচনার ঝড় তুললেন যে মডেল
গাছ লাগানোর সঠিক সময় কখন?
৫০ জন কনের যৌতুক ছাড়া বিয়ে
জীবন্ত অবস্থায় কবর দেবার চারদিন পর বৃদ্ধকে জীবিত উদ্ধার
কর্মক্ষেত্রে একাকিত্ব বোধ করেন?
ভালো কাজ করলেই খাবার পাওয়া যায় যেখানে
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ার কারণ ও সমাধান
বৃষ্টির মতো ছিটকে পড়ছে স্বর্ণ
জাপানে খালি পড়ে আছে ৯০ লাখ বাড়ি
আজ বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটানোর দিন
তীব্র তাপপ্রবাহে পানি শুকিয়ে জেগে উঠলো ৩০০ বছরের পুরনো শহর
পুরানো প্রেম ভুলবেন কী করে?
মানুষের সেরা বন্ধু ছিল শিয়াল: গবেষণা
‘সুপার-শি’ দ্বীপ; যেখানে পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
চরম পানির সংকটে পড়বে ভবিষ্যৎ পৃথিবী
ইতিহাসের ‘সফলতম’ নারী জলদস্যু; যার আয়ত্ত্বে ছিল ৮০ হাজার সৈন্য
চুয়িং গামের ইতিহাস জানা আছে কী?
একজন মানুষের চেহারা মনে রাখার ক্ষমতা কত?
সুখে থাকার দিন আজ
উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বগুণ বাড়াতে করণীয়
চাঁদ হঠাৎ ভ্যানিশ হয়ে গেলে পৃথিবীর কী হবে?